আঞ্চলিক নেতৃত্বের জেরে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন
আমানুল্লাহ কবীর
সৌদি আরবসহ আরও ছয়টি দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের বিষয়টি আঞ্চলিক আধিপত্যের বিস্তারকে কেন্দ্র করে হয়েছে। সম্পর্ক ছিন্নের বিষয়টি পরিষ্কার গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দিনদিন বিভেদ-বিভক্তি বেড়ে যাওয়া। বিভেদ-বিভক্তির বাড়ার অন্যতম কারণ হলোÑ মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি দেশের মধ্যে বৈরী মনোভাব বজায় রাখা। শিয়াপন্থি দেশগুলোকে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইরান আর সৌদি আরব নেতৃত্ব দেয় সুন্নিপন্থি দেশগুলোকে। বর্তমানে সৌদি আরব ও ইরান মধ্যপ্রাচ্যে শক্ত প্রতিপক্ষ।
কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন দেশগুলোর অভিযোগ, কাতার আরব দেশগুলোর মধ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও সন্ত্রাসবাদের মদদ দিচ্ছে। কাতারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ কতটুকু যুক্তিসঙ্গত সেটা ভাবার বিষয়। কেননা কাতার কর্তৃপক্ষ আরব অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও সন্ত্রাসবাদের মদদ দেওয়ার অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে এখানে রাজনৈতিক চাল রয়েছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
কাতার আয়তনের দিক দিয়ে ছোট দেশ হলেও তেল সমৃদ্ধ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বড় ব্যবসা সেখানে। এটা ছিল কাতারের বড় সুবিধা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন সৌদি আরব সফর যান তখন থেকেই দৃশ্যপট ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে। আরব দেশগুলোতে বিভক্তি বাড়ার পেছনে ট্রাম্পের সৌদি সফর অনেকাংশে দায়ী। আরব দেশগুলোতে বিভক্তি বা অস্থিতিশীলতার পেছনে মূল কারণ হলো আঞ্চলিক নেতৃত্ব জের। মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক নেতৃত্ব কে দিবে? এটা কী সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন দেশ, না ইরান সমর্থিত দেশ দিবে। কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের মূল সমস্যা হলো আঞ্চলিক নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব।
সৌদি আরব মনে করে কাতার মিসরের নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে সহযোগিতা করছে। অন্যদিকে মুসলিম ব্রাদারহুড হলো সৌদি আরবের ঘোর বিরোধী। কেননা মুসলিম ব্রাদারহুড সৌদি আরবের রাজতন্ত্র মানে না। আবার ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সাম্প্রতিক সম্পর্ক খুবই তিক্ত। বিশেষ করে শিয়া-সুন্নি সম্প্রদায়কে কেন্দ্র করে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে অনেক আগেই। এমনকি সৌদি আরব নিজ দেশে বসবাসরত শিয়াদের নিয়ে খুবই শঙ্কিত।
কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাবকে দমন করার প্রয়াস মাত্র। এখন দেখার বিষয় কাতার কীভাবে কূটনৈতিক ঝামেলা সামাল দিবে। মধ্যপ্রাচ্যে আরব দেশগুলো নিজেদের বিভেদ-বিভক্তির বিষয়টিকে কতটুকু জোর দিবে।
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন
সম্পাদনা: আশিক রহমান