ছয় দফার যোগফল
ড. অনুপম সেন
পূর্ব পাকিস্তানের সরকার অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে আর পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতির পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করবে। পূর্ব পাকিস্তানে যে ট্যাক্স আদায় হবে সেটা পূর্ব পাকিস্তানের আর পশ্চিম পাকিস্তানের যে ট্যাক্স আদায় হবে সেটা পশ্চিম পাকিস্তানের থাকবে। এবং স্থানীয় সরকারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের যে পরিমাণ খরচ লাগবে তারা সেটা ডিস্ট্রিবিউট করবে। সহযোগিতা হিসেবে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার ভাগ দুই পাকিস্তানই পাবে। সে জন্য দুটি মুদ্রা এবং দুটো হিসাব থাকতে হবে। এক দেশের আয় অন্য দেশে স্থানান্তর করা যাবে না। কিন্তু তখনকার পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার তা মানেনি।
১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে যুদ্ধ হয়, তখন পূর্ব পাকিস্তানে পর্যাপ্ত সৈন্য ছিল না। বঙ্গবন্ধু তখন বললেন, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য আলাদা সৈন্যবাহিনী গঠন করতে হবে। কিন্তু আইয়ুব খান তা মানতে চাইলেন না। বরং তিনি তখন বললেন, এসব দেশদ্রোহীতা। শেখ মুজিব যদি যুক্তির ভাষায় না বোঝেন তাহলে তাকে অস্ত্রের ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়া হবে। অন্যদিকে শেখ মুজিব ৬ দফার দাবির সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেওয়া হলো। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নস্যাৎ হলো। বঙ্গবন্ধু জেল থেকে রেরিয়ে এলেন এবং শেষ পর্যন্ত আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। আইয়ুব খানের জায়গায় ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এলেন। ইয়াহিয়া খানকে বোঝানো হলো আগের মতো সংবিধান তৈরি করতে পারবেন না।
৬ দফা দাবির গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ধনী, আমরা হচ্ছি শোষিত। সেই সময় পূর্ব পাকিস্তানের জিডিপি থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের জিডিপি ছিল অনেক বেশি। ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাস্তিানের মাথাপিছু আয়ের চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের মাথাপিছু আয় ৭০ শতাংশ বেশি হয়ে যায়। ৬ দফার কারণেই আজ আমরা স্বাধীন। এখন আমাদের ২২ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যা ১৯৭১ সালে অনেক বেশি ছিল। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ এখন আমরা। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩২ বিলিয়ন ডলার, রপ্তানি আয় ২০ বিলিয়ন ডলার। ৯০ শতাংশ ছেলেমেয়ে এখন প্রাইমারি স্কুলে যায়। পড়াশোনা করে। প্রায় সবক্ষেত্রেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি পাকিস্তানের চেয়ে। পাকিস্তানিরা একসময় আমাদের শোষণ করেছিল, আমরা লড়াই করেছি। আমাদের লড়াই-সংগ্রামের ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী প্রশংসতি। এই এগিয়ে যাওয়া আমাদের প্রাপ্য ছিল, সেটা এখন পাচ্ছি। বাংলাদেশ এখানেই থামবে না, পৃথিবীর জন্য রোল মডেল হবে একদিন।
পরিচিতি: উপদেষ্টাম-লীর সদস্য, আওয়ামী-লীগ
মতামত গ্রহণ: ফাতেমা-তুজ-জোহরা
সম্পাদনা: আশিক রহমান