মাহে রমযান : ফজিলত ও করণীয়
া মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ নাটোরী
রমযান মাস, বছরের সমস্ত মাসের মধ্যে শ্রেষ্টতম মাস। সবচেয়ে বেশী সওয়াব অর্জনের মাস। রমযান হল মুসলমানদের সওয়াব অর্জনের সিজন। এ মাসে একটা নফল ইবাদতের সওয়াব ফরজের সমতুল্য হয়ে যায়।একটা ফরজের সওয়াব ৭০ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। মাহ রমযানের ফযিলত ও বৈশিষ্টতা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের এই আয়াতে ইরশাদ হয়,
রমযান মাস যাতে অবতীর্ন হয়েছে কুরআন, মানুষের দিশারী ও সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এই মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোজা রাখে [সূরা বাকারা,২:১৮৫]
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আছে, রাসূল সা. বলেছেন, মাহ রমযান তোমাদের মাঝে এসে গেছে, এ এক বরকত ও মহিমান্বিত মাস। আল্লাহ তোমাদের উপর এ মাসের সিয়াম ফরজ করেছেন, এ মাসে জান্নাতের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, এতে আছে এমন এক রজনী; যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। (মুসনাদে আহমাদ-৭১৪৮)
কাজেই মুমিনের কর্তব্য হল; এমাসের কদর করা। আর তা এভাবে যে, প্রতিটি ফরজ রোজা যতেœর সাথে আদায় করা, অনান্য ফরজ বিধানগুলোও অতি যতেœর সাথে পালন করা, গুনাহ ও পাপাচার থেকে দূরে থাকা, সাথে সাথে গুরুত্বসহকারে তারাবীর নামাজ আদায় করা। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতিসাবের সাথে তারাবিহ আদায় করে, তার পূর্বেকার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। [সহীহ বুখারী]
বিশ রাকাত তারাবিহ পড়তে আমাদের কতো কষ্টবোধ হয়? অথচ সাহাবায়ে কেরাম অনেক কষ্ট করে লম্বা লম্বা সূরা কিরাত পড়ে অর্ধ রাত পর্যন্ত তারাবিহ নামাজে কাটিয়ে দিয়েছেন। রমযানে কুরআন কারীম তিলাওয়াত করা অনেক বড় একটি আমল। রমযানের সাথে পবিত্র কুরআনের সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এই কুরআনকে মাহে রমযানে অবতীর্ন করেছেন। তাই তো দেখা যায় রাসূল (সা.) প্রতি রমযানে জিব্রীল আমীনের (আ.) সাথে কুরআন দাওর করতেন। বিদায়ের বছর রাসূল (সা.) ২ বার দাওর করেছেন। আসমানী যতো কিতাব আল্লাহ তায়ালা নাযিল করেছেন সব মাহে রমযানে। ১ম রমযানে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর উপর সহীফা নাযিল করা হয়। ৬ষ্ঠ রমযানে তাওরাত নাযিল করা হয়। ১২ই রমযানে যাবুর নাযিল করা হয়েছে। এবং ১৮ই রমযানে ইঞ্জিল নাযিল হয়েছে। আর ২৪ রমযান রাতে পবিত্র কুরআন নাযিল করা হয়। [মাআরিফুল কুরআন, ইদ্রিস কান্ধলবী কৃত; ১/৩৬৪]
মোদ্দকথা, মাহে রমযান এমন এক আশ্চর্যজনক মাস, যে মাসে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালাম নাযিল করেছেন। আর আল্লাহর প্রেরিত এ কিতাব আমাদের জন্য এক নিয়ামত ও বহুত বড় ইহসান। এ কারণে এই মহান মাসের শুকরিয়ায় এমন এক বিশেষ ইবাদত নির্ধারিত হওয়া উচিৎ যা কালামে ইলাহীর উপযোগিতা হলো রোযা। যা তার রোজাদারকে পানাহার ও স্বাদ তরক করার কারণে ফিরিশতাদের নিকটবর্তী করে দেয়। হৃদয়ে আল্লাহর কালামের রহস্য কবুল যোগ্যতা সৃষ্টি করে দেয়। এই কারণে যখন মুসা (আ.) তূর পর্বতে তাওরাত কিতাব নেয়ার জন্য গেলেন তখন তিনি চল্লিশ দিন রোযা রাখলেন। হযরত ঈসা (আ.) ময়দানে চল্লিশ দিন রোযা রাখলেন, ঐ সময় আল্লাহ তায়ালা তাকে ইঞ্জিল কিতাব দান করেন। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) যখন হেরা গুহায় রোযা ও ইতিকাফ করলেন তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর উপর পবিত্র কুরআন নাযিল করেন। এসমস্ত ঘটনা দ্বারা বোঝা গেল যে, রোযার সাথে আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।
এ জন্য আমাদের উচিত এ মোবারকময় মাসের দিনগুলো রোযার সাথে কাটানো। এবং রাতে সালাতুত তারাবিহের প্রতিও যতœবান হওয়া। শেষ দশকে ইতিকাফ করা। দিবা-রাত্রি বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। কেননা কুরআনের জন্য বিশেষভাবে আল্লাহ তায়ালা এই মাসকে পছন্দ করেছেন।
আসুন আমরা কুরআন কারীমের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের জীবনকে গড়ে তুলি। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমীন। (লেখক; মুহাদ্দিস, ইমাম ও খতীব)