সাহরি ও ইফতার গ্রহণ ইবাদত
ামুফতি হিদায়াতুল্লাহ আদনান
সারা দিন রোজা রাখার পর স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অপেক্ষা থাকে কখন ইফতারের সময় হবে। সময় যত ঘনিয়ে আসে ততই আনন্দ ও উত্তেজনার ছাপ ছড়িয়ে যায় যুবা-বৃদ্ধ-শিশু সকলের চেহারায়। সামনে রাখা খাবার। ঠিক সময় হবার অপেক্ষা। এ অপেক্ষা শুধু খাবার গ্রহণের অপেক্ষা নয়। এ অপেক্ষাও ইবাদত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : রোজাদারের দুইবার আনন্দ করার সময়; এক যখন ইফতার করে তখন সে আনন্দিত হয় এবং আরেকবার যখন সে আল্লাহর সাক্ষাত লাভ করবে তখন (আল্লাহর প্রতিদান দেখে) আনন্দিত হবে। বুখারি শরিফ
রোজাদার তার সাধ্যমত ইফতার সমগ্রী নিয়ে বসে আছে। অল্পক্ষণ পরেই মাগরিবের আযান হবে। সে ইফতারি মুখে দিয়ে এ দিনের মত রোজা শেষ করবে। মহান আল্লাহর কাছে এ দৃশ্য খুব প্রিয়। আল্লাহ তখন বান্দার দিকে তাকিয়ে থাকেন। এসময় যদি সে দোয়া করে তাহলে আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। (তারগিব)
দোয়া শেষে রোজাদার ইফতারি মুখে দেয়। এটা শুধু উদরপূর্তি নয়; ইবাদতও। তাই সময় হবার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার শুরু করা। বিশেষ কারণ ছাড়া বিলম্বিত করা অনুচিত। হাদিসে এসেছে : যত দিন মানুষ (সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে) ইফতার করে নিবে ততদিন তারা কল্যাণের পথে থাকবে। (বুখারি ও মুসলিম)
হযরত আবু হুরাইরা রাযি. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাষ্যে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন : আমার যে বান্দা সময় হবার পর দ্রুত ইফতার করে নেয়া সে আমার খুব প্রিয়। (তিরমিজি)
যে কাজে আল্লাহ খুশি হন তা ইবাদত। ইফতার গ্রহণও একটি ইবাদত বলেই যথা সময়ে তা করলে আল্লাহ খুশি। আর আল্লাহকে খুশি করতে হালাম সম্পদ খরচ করা বাঞ্ছনীয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এ তো গেল ইফতারের কথা। পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের মত সাহরি খাবারেরও অনেক গুরুত্ব। কেউ সাহরি না খেয়ে রোজা রাখলে তার রোজা হয়ে গেলেও সাহরি খাবার সওয়াব থেকে সে বঞ্চিত হবে। ইফতার যেমন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া, সাহরি তেমনি শেষ সময়ে খাওয়া। এর সময় সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত। এর পরে খেলে রোজা হবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : তিন কাজ আল্লাহ পছন্দ করেন; সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা, শেষ সময়ের দিকে সাহরি খাওয়া এবং নামাজে এক হাত আরেক হাতের ওপর রাখা। (আলআওসাত)
সাহরি খাওয়ার পেছনে অনেক তত্ত্বকথা লুকায়িত। এটা অনেক সওয়াবেরও কাজ। এসম্পর্কে হযরত আনাস রাযি. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, ‘তোমরা সাহরি খাও। কেননা, সাহরি খাবার গ্রহণে রয়েছে বরকত।’ (বুখারি শরিফ) এহাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি লেখেন : সাহরি গ্রহণে যেমন নেকি ও সওয়াব রয়েছে তেমনি সাহরির কারণে রোজাদারের পক্ষে রোজার মত ফরজ বিধান পালন সহজতর হয়। ইবাদতে সতেজতা অনুভব করে। কষ্ট কম হয়। তা ছাড়া সাহরির সময়টা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সময়। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা এসময় তাহাজ্জুদে মশগুল হয়। দোয়া কবুলেরও শ্রেষ্ঠ সময়। সাহরি গ্রহণে সুন্নত পালন হয়। অমুসলিমদের উপবাস থেকে মৌলিক পার্থক্য হয়। তাকওয়া বৃদ্ধি পায়। দিনের বেলা খিদের কারণে কুচিন্তা থেকে মনকে পবিত্র রাখে। শুরুরাত্রে রোজার নিয়ত না করে থাকলে নতুন করে নিয়ত করে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও বহুবিধ কল্যাণ আছে সাহরি গ্রহণের মধ্যে। আসুন, সাহরি ও ইফতারকে ইবাদতের রূপ দিই। নেকির বসন্তে আমলের পাল্লা ভারি করি।