আগামী নির্বাচন বিএনপিকে সামনে রেখে দুই কৌশলে আওয়ামী লীগ
আল হেলাল শুভ : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির নির্বাচনে আসা ও না আসার উপর নির্ভর করে দুই কৌশল হাতে নিয়ে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচনে এলে প্রথম কৌশল, আর না এলে দ্বিতীয় কৌশল নেবে দলটি। প্রথম কৌশলে দল জোটবদ্ধ নির্বাচন ও দ্বিতীয় কৌশলে ভিন্ন সমীকরণ নিয়ে আগাবে তারা। তবে বিএনপি নির্বাচনে আসছে বর্তমানে এটা ধরে নিয়েই বর্তমানে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চায় ক্ষমতাসীনরা। দলটির নেতাদের বক্তব্যে এমন কথা উঠে এসেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপির ভিশন ঘোষণা, বিভিন্ন আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা, দলের নেতাদের বিভিন্ন সময়ের কথা-বার্তায় মনে হচ্ছে তারা নির্বাচনে আসবে। তাই জোটগতভাবে নির্বাচনি পরিকল্পনাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিএনপি আসলে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে আগামী নির্বাচন। এ জন্য এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে বিএনপি নির্বাচনে না আসলে সমীকরণ কি হবে? তাও ঠিক করে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন এই দলটি। তবে সে কৌশল কি হবে এখনো নির্ধারণ হয়নি বলেই মত দলটির অধিকাংশ নেতার।
কিছু দিন আগে ধানম-ির এক সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ১৪ দলীয় জোট একটি আদর্শিক জোট। তাই ভালোমন্দ সবকিছুই এই জোটের সঙ্গে মিলেই করবো। আগামী নির্বাচন আশা করি আমরা জোটগতভাবে করবো।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বড় যোগ্যতা হবে জয়ী হয়ে আসার সক্ষমতা। এ ক্ষেত্রে বর্তমান অনেক এমপি-মন্ত্রী মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ পরতে পারেন। কারণ অনেক এমপি-মন্ত্রীর এলাকা ও নিজ দলের নেতাকর্মীদের কাছে অবস্থান ভালো নয়। প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। জনবিচ্ছিন্ন এমপি-মন্ত্রীদের বাদ দিয়ে মাঠপর্যায়ে জনপ্রিয়তা রয়েছে এমন ক্লিন ইমেজের নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে যিনি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, বিএনপি প্রার্থীর চেয়ে বেশি শক্তিশালী, তাকেই চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতারা আরও জানান, এবার দলের প্রার্থী বাছাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছু চমক দেবেন। দলের সাংগঠনিক রিপোর্টের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার জরিপকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। যাকে টিকিট দিলে পাস করতে পারবে বলে মনে হবে তাকেই নৌকার টিকিট দেওয়া হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আবারো ক্ষমতায় আসতে তিনি চমক দেখাবেন আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে।
আওয়ামী সূত্রগুলো বলছে, দেশের রাজনীতিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের জন্য এ নির্বাচন অনেক দিক থেকে চ্যালেঞ্জের। বিএনপি নির্বাচনে এলে তাদের সামনে রেখে নির্বাচনি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। আর না এলে জাতীয় পার্টি-বামদল ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে সামনে রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে আওয়ামী লীগ তাদের শরিক দলগুলো, জাতীয় পার্টি, ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে দিয়ে তিনশ আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ তিনশ আসনে প্রার্থী দেবে। তবে এক্ষেত্রে কোন দল কাকে কোন আসনে ছাড় দেবে সেই সমঝোতা হবে ভেতরে ভেতরে। আর প্রকাশ্যে প্রবলভাবে নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা তুলে ধরা হবে বিশ্ববাসীর সামনে। বিএনপি অংশ নিলে আওয়ামী লীগ শরিকদের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৮০টি আসন ছাড় দিতে পারে। জাতীয় পার্টিকে ২৫টি, ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে ২০ আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এর বাইরে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে কিছু আসন ছেড়ে দেবে দলটি।