ভ্যাটও রাখবেন, আবার ভোটের চিন্তাও করবেন?
আবদুল্লাহ আল মেহেদী
আগামী বছরের শেষে অথবা ২০১৯ সালের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তা নির্বাচনের আগে তার পূর্ণাঙ্গ বাজেট। আগামী বছর যে বাজেট প্রস্তাব করবেন, তা এই সরকার বাস্তবায়ন করে যেতে পারবে না। তাই এ বাজেট কিছুটা রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হয়েছে বলে মনে হয়। আকারে ঊর্ধ্বগতি আছে। ব্যয় বৃদ্ধির দিক থেকে অনেক বড় বাজেট। ব্যয় বৃদ্ধিকে খারাপ মনে করি না। নির্বাচনকে সামনে রেখে বাজেট বিধায় স্থানীয় সরকার পর্যায়ে উন্নয়ন বাজেট, বিশেষত এলজিইডির মাধ্যমে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে তার আকার অনেক বাড়বে। তবে তাতে গুণগতমান বজায় থাকবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে।
অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ হবে বলে আশা করেছেন। প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। অনেকে মনে করেন, এ লক্ষ্যমাত্রা রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হয়েছে। এটা বাস্তবভিত্তিক হওয়া উচিত। এখন বিদায়ী অর্থবছরে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যদি সত্যি সত্যি অর্জিত হয়, সেক্ষেত্রে ৭ দশমিক ৪০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা বেশি নয়। এডিপি বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি পর্যায় থেকে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকলে এবং রপ্তানিতে যে শ্লথগতি আছে তা দূর করা গেলে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে না। অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশে সীমিত রাখার প্রস্তাব করেছেন। এটা অর্জন করতে পারলে খুবই ভালো হবে। যদিও চালসহ অন্য কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে বর্তমান মূল্যস্ফীতি অনেকটা চড়া। এটাকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে অনেক বাধা আছে। শেষ পর্যন্ত এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এদিকে রাজস্ব আদায় বাড়াতে গিয়ে সরকার ছোট ছোট কিছু খাত থেকে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে একটা বড় ভুল পদক্ষেপ আছে তা হলো ব্যাংকের সঞ্চয়ের ওপর আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি। এটা খুবই খারাপ হয়েছে। এটা মানুষকে বৈধ পন্থায় সঞ্চয় ও লেনদেনে নিরুৎসাহিত করবে। অবৈধ পথে লেনদেন বাড়বে, যা সরকারই নিরুৎসাহিত করে। কো-অপারেটিভসহ ডেসটিনি, যুবকের মতো ভুঁইফোড় কোম্পানির দিকে ঝুঁকে পড়বে মানুষ। অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে নেবে। অবৈধ অর্থনীতির আকার বড় হবে। যাকে আমরা মাটির নিচের অর্থনীতি বলি। বাজেটের বড় লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন। এজন্য সরকারকে সামাজিক অবকাঠামো খাতে ব্যয় বাড়াতে আরও মনোযোগী হতে হবে। এজন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্যবিমোচনে সরকারকে বর্তমানের তুলনায় অনেকগুণ ব্যয় বরাদ্দ রাখতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, শিক্ষায় জিডিপির আকারের ৬-৭ শতাংশ ব্যয় করার প্রয়োজন থাকলেও সরকার করছে মাত্র ২ শতাংশ। যেটা অনেক কম ও নিতান্তই সল্প। সরকার আবার জোর গলায় শিক্ষার জয়গান গায়।
বাজেট পেশের দিন ইফতারের একটু আগে এক ভদ্রলোককে দেখলাম খুব রেগে আছেন। কেন তিনি বিরক্ত, কার উপর বিরক্ত বুঝতে পারলাম তার বক্তব্যে থেকেই, ‘ভ্যাটও রাখবেন, আবার ভোটের চিন্তাও করবেন?’ (শেষ)
লেখক: কলামিস্ট
ধনফঁষষধযধষসবযবফর@ুসধরষ.পড়স
সম্পাদনা: আশিক রহমান