জয় বিজয়ে টাইগার ক্রিকেট
মোহাম্মদ রফিক
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় জয় পেয়েছে। ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের এ জয় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ যখন ৩৩, তখন প্রথম ৪ ব্যাট্সম্যান হাওয়া! খাদের কিনারায় হাবুডুবু খাওয়া দলটিকে সাকিব ও রিয়াদের রেকর্ড ২২৪ রানের জুটি উদ্ধার করে। ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে অবিস্মরণীয় জয় এনে দেয়। আমরা অনেক সময় বলে থাকি, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অনেক বদলে গেছে। দলের ব্যাটিং এবং বোলিংয়ে এসেছে বৈচিত্র্য। বাংলাদেশের এ বিজয় কি দলের বৈচিত্র্য প্রমাণ করে না? এ জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যেকোনো দলের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম তা আবারও প্রমাণ করল। দলের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের সংগ্রহের জুলিতে মোট ২৫ রান। বাংলাদেশের এই করুণ অবস্থায় ড্রেসিংরুমে হয়তো আলোচনা চলছিল কীভাবে হার এড়ানো যায়। নিউজিল্যান্ডের বোলিং তোপে টাইগার টপ অর্ডাররা বিধ্বস্ত। দল নিঃসন্দেহে খাদের কিনারায় পৌঁছে গেছে। উইন প্রেডিকশনও বলছিল, জয়ের পাল্লাটা নিউজিল্যান্ডে ৮১ আর বাংলাদেশে ১৯ টিভি স্ক্রিনে বারবার দেখানো হচ্ছিল। আবারও বিপদে কা-ারি রূপে স্বমহীমায় হাজির হলেন সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ। প্রেডিকশন ভুল প্রমাণিত করে বাংলাদেশকে এনে দিল এক অবিশ্বাস্য জয়।
বাংলাদেশের চার উইকেট পতনের পর সাকিব-রিয়াদ যে জুটি গড়লেন তা আন্তর্জাতিক একদিনের ক্রিকেট ইতিহাসে পঞ্চম উইকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটি। এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা যে চিন্তা-ভাবনা করে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারে তার প্রমাণ নিউজিল্যান্ডের এই ম্যাচটি। তবে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মনে বিশ্বাস রাখতে হবে যে আমরা পারি, আমরা পারব। আমাকে দলের জন্য ভালো কিছু উপহার দিতে হবে এই বিশ্বাসটি ধরে রাখতে হবে। প্রতিটি খেলোয়াড়ের মনে পোষণ করতে হবে যে, আমরা বিশ্বের যেকোনো দলের চেয়ে কম নই। এই বিশ্বাসটা মনের মধ্যে না থাকলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। এই বিশ্বাসটা নিজে নিজে তৈরি করতে হবে।
মোসাদ্দেক হোসেন তার নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। ৩ ওভার বল করে ১৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট, ম্যাচে তো তখনই পিছিয়ে পড়েছিল নিউজিল্যান্ড। মোসাদ্দেক হোসেন দারুণ বল করলেন, দলকে ম্যাচে রাখলেন। এখানেই মাশরাফি বিন মর্তুজার চমক। অন্য বোলাররা ভালো বল করলেও উইকেট পাচ্ছিল না, ঠিক তখনই মোসাদ্দেককে বোলিংয়ে আনা হয়েছিল। এ জয়ের পার্শ্বনায়ক মোসাদ্দেক, তা বলতে একটুও দ্বিধা নেই। ক্রিকেটপ্রেমী এদেশের মানুষ চায় বিজয়ী এই নায়কেরা নিয়মিতই জয় উপহার দিক। আনন্দে ভাসুক দেশ। মানুষের এই প্রত্যাশা নিশ্চয়ই পূরণ করতে সর্বোচ্চ প্রয়াস চালাবে আমাদের ক্রিকেটাররা, সে বিশ্বাস আমার আছে। দেশবাসীও তাদের প্রতি বিশ্বাস রাখে। জয় আমাদের ক্রিকেটের হবেই।
পরিচিতি: সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন/সম্পাদনা: আশিক রহমান