তিন বাঙালি কন্যার ব্রিটেন জয় ও অদম্য বাংলাদেশ
ড. অনুপম সেন
বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, রুশনারা আলী ও রুপা হকÑ ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী তিন বাঙালি কন্যা। তাদের এই বিজয় থেকেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মেয়েরা যে এখন বিশ্ব পরিসরে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে তারই প্রমাণ। যেসব দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের উন্নয়ন বিস্ময় সৃষ্টি করে দিয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে যে মন্দা শুরু হয়েছিল সেই মন্দা বিশ্বে প্রায় সব দেশকেই প্রভাবিত করেছিল। এমনকি চীন এবং ভারতকেও প্রভাবিত করেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কোনো সময়ই সেই মন্দার কবলে পড়েনি। বরং এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। তা পুরো বিশ্বকে অবাক করেছে। যে বাংলাদেশকে কেউই চিনত না এবং এমনকি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও আমি তখন বিদেশে ছিলাম, ১৯৭৩ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সময়ে আমি কানাডাতে ছিলাম। তখন বাংলাদেশ বললে কেউ চিনত না, কিন্তু বঙ্গবন্ধু বললে, সবাই চিনত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম সবার কাছে পরিচিত ছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পরবর্তী বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ পরিচিত হয়েছিল মিসকিনের দেশ হিসেবে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশকে বলা হতো মিসকিনের দেশ। অন্যান্য জায়গায়ও বাংলাদেশকে সম্মানের সঙ্গে দেখা হতো না। কিন্তু আজ সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। আজ বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্ময়কর অগ্রগতি দেখে বিশ্ব অবাক। কেবলমাত্র আর্থিক উন্নয়ন নয়, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রগতি হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক ভালো করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মেয়েদের অগ্রগতি ইর্ষণীয়। ভারত থেকেও বেশি। পাকিস্তান থেকে তো অনেক বেশি। তবে শ্রীলঙ্কার কাছাকাছি। শ্রীলঙ্কার মেয়েরা অনেক আগে থেকেই এগিয়ে। তাদের অগ্রগতি, উন্নয়নের জায়গা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদেরও অতিক্রম করে গেছে আমাদের মেয়েরা। বাংলাদেশের মেয়েরা বিশ্বসভায় এখন বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। যেমনটা রাখছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার অনুষ্ঠানে তিনি সভাপতিত্ব করছেন। জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোতেও তাকে সভাপতিত্ব করতে দেখা যায়। বুদ্ধি ও জ্ঞানভিত্তিক অগ্রগতির কারণেই বাংলাদেশের মেয়েরা আজকে বিশ্বসভায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃত্বের আসনে বসছে। এটা আমাদের মেয়েদের যোগ্যতার ফল। যা আমাদের গর্বিত করে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১৪ জন ব্রিটেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে তিনজন জয়ী হয়েছেন। বাকিদের অবস্থা জানা যায়নি। তবে ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। বাংলাদেশের মেয়েরা তো ভীষণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে অকল্পনীয় অগ্রগতি সাধন করেছে গত দুই দশকে। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের আমলে। সরকার ২০০৯ সালের প্রথম থেকে ক্ষমতায় রয়েছে। এই সময়ে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগতি অসাধারণ। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বাংলাদেশের মেয়েরা পৃথিবীর প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা আমাদের আশার জায়গা, ভরসার জায়গা ও আনন্দের জায়গা। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে যাবে। এদেশের নারীরাও এগিয়ে যাবে। ছুটে চলছে মানুষ, অগ্রগতির দিকে। ছুটছে বাংলাদেশও। অদম্য এই বাংলাদেশকে কেউ থামাতে পারবে না।
পরিচিতি: উপদেষ্টাম-লীর সদস্য, আওয়ামী লীগ
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ/সম্পাদনা: আশিক রহমান