লালপুরে পদ্মার চরে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার হাতছানি
জালাল উদ্দিন,নাটোর : নাটোরের লালপুরে উপজেলায় পদ্মার বিস্তীর্ণ চরে হাতছানি দিচ্ছে বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত সারা দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে এটি একটি। যোগাযোগ ব্যবস্থা, সরকারের বিপুল পরিমান খাস জমি, বিদ্যুতের সহজলভ্যতা, গ্যাস সরবরাহের সুযোগ, পানির সরবরাহ ও বন্টনের সুবিধা, বর্জ্য সংগ্রহ, শোধন ও অপসারণের সুবিধা, বাসস্থান, চিকিৎসা সেবা, সহজে কাঁচামাল প্রাপ্তির সব রকম সুবিধাসহ আর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সকল সম্ভাবনাই বিদ্যমান লালপুরের পদ্মার চরাঞ্চলে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে নদীভাঙন কবলিত এই এলাকার একদিকে যেমন নদীভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে তেমনি লালপুরসহ জেলার কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে।
জানা গেছে, চরজাজিরা, আরাজিবাকনাই, লালপুর, রসুলপুরসহ যেসব মৌজার জমি খাস রয়েছে, সেসব জমির ওপর দিয়ে এক সময় প্রবাহিত ছিল পদ্মা নদীর মূল স্রোতধারা। ফলে ১৯৬৭ সালে আরএস রেকর্ড (১৯৭২ সালে বিতরণকৃত) প্রস্ততকালে তা কোন ব্যক্তির নামেই রেকর্ড হয়নি। বর্তমানে পদ্মা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় জেগেওঠা ওই জমিগুলো সরকারি খাস খতিয়ানে রয়েছে। তাই কোন ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য মূলত উপজেলার চরজাজিরা মৌজাকে লক্ষ্য করে এগুচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ওই মৌজাতেই তিন’শ একরের বেশি খাস জমি রয়েছে। এই খাস জমিতেই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা সম্ভব বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের সদস্যরা।
তবে রাস্তাঘাট নির্মাণে জমি দরকার হলে ন্যায্য মূল্য দিয়ে তা অধিগ্রহণ করা হবে। সরজমিনে লালপুরে পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ চর এলাকায় গিয়ে জানা গেল চরাঞ্চলের ৬ টি মৌজায় প্রায় ৩ হাজার ৪শ ১৮ একর জমি রয়েছে। এরমধ্যে পাঁচশো একর খাস জমি রয়েছে। বাঁকি ২৯শ’ একর জমি রয়েছে ব্যক্তি মালিকানায় যা অধিগ্রহণ করা হবে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পদ্মার চর ও তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৩৪’ শ একর জমির পুরোটাই প্রয়োজন হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক অনুমোদনের পর অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে গত ২ মে ২০১৫ স্থান নির্ধারণ ও সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক নুরুন্নবী মৃধা উপজেলার চরাঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পক্ষে মত দেন। এর পর থেকে লালপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়। ওই বছরের ২১ নভেম্বর ২০১৫ বেজার নির্বাহী সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ আব্দুস সামাদ এবং ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ বেজার নির্বাহী সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব এসএম শওকত আলী চরজাজিরা মৌজার প্রস্তাবিত নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করেন। এরপর গত ৩১শে জানুয়ারী ২০১৬ তারিখে চার সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদলও প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের এই স্থানটি পরিদর্শন করেন। তারা চরাঞ্চল ঘুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সব সুযোগ সুবিধাই রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। তারা সড়ক, রেলওয়ে ও ঈশ্বরদী বিমানবন্দরসহ সব ধরনের যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ সংযোগ সহজেই কাজে লাগানোর সুবিধা যাচাই করেছেন। তারা জানান, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে কৃষি ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। সহজলভ্য কাঁচামাল দিয়ে পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে এখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আহবান জানানো হবে। তবে কৃষি ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি ইলেকট্রনিক্স কারাখানাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা যাবে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান হবে এখানে। উৎপাদিত পণ্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য রপ্তানীও করা যাবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চল সমুহের দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের তালিকায় নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চলের নামও রয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিদ্যুৎ প্রাপ্তির বিষয়টি একধাপ এগিয়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে ভূমি জরিপ কার্যক্রম শেষেই সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের কাজ শুরু হবে।
শুক্রবার পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) চেয়ারম্যান (সচিব) পবন চৌধুরী বলেছেন, আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে নাটোরের লালপুর উপজেলার অর্থনৈতিক জোনের কাজ শেষ হবে। এজন্য জমি অধিগ্রহণ, মাটি ভরাট, বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবরাহ সহ প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করা হবে। অর্থনৈতিক জোনের কাজ শুরু হলে প্রায় সাতশত ঘরবাড়ি ভাঙ্গা পড়বে। সেজন্য তাদের পুনর্বাসনে অন্যত্র বাড়িঘর নির্মাণসহ ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এজন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও নাটোর জেলা প্রশাসনকে যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রস্তত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সমীক্ষার কাজ চলছে। খুব শিগগিরই লালপুরের অর্থনৈতিক জোনের জমি অধিগ্রহণসহ আনুষাঙ্গিক কাজ শুরু হবে। সম্পাদনা: মুরাদ হাসান