কাতারের সঙ্গে কেন এই বিচ্ছেদ?
যাকারিয়্যা মাহমুদ
মধ্যপ্রাচ্যের সমৃদ্ধশালী দেশ কাতার ও তার এক সময়কার মিত্র দেশগুলোর বর্তমান সঙ্কট বিশ্ব পরিস্থিতিকে চরম উত্তপ্ত ও ঘোলাটে করে দিয়েছে। সবার দৃষ্টিই এখন আরব উপসাগরের এই দেশগুলোর প্রতি। প্রকৃত ঘটনা কি? কি হতে চলেছে আসলে, সেদিকে সবাই সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। গত দুদিন যাবৎ সোশ্যাল নেটওয়ার্কগুলো এ নিয়ে সরব। ফেসবুক টুইটারে চলছে ব্যাপক লেখালেখি ও তোলপাড়। আলোচনা সমালোচনাও চলছে সমান তালে। কৌতূহল নিয়ে কয়েকজনকে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেছিলাম যে, কেন সৌদি আরবসহ আরও পাঁচটি দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে? অধিকাংশরাই ভাসা ভাসা উত্তর দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন জানি না কেন এমনটি ঘটেছে।
সম্পর্ক ছিন্নকারী দেশগুলোর কাতারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছেÑ কাতার হামাস, মুসলিম ব্রাদারহুড, আল কায়দাসহ দায়েশ, শিয়া মিলিশিয়া ও ইয়েমেনের সন্ত্রাসী হুছি ছাড়াও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সমর্থন, আশ্রয় ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে এবং মধ্যপ্রাচ্যে কাতার উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। মূলত সন্ত্রাসবাদের এই কথিত অভিযোগেই দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। পরে ইয়েমেন ও মালদ্বীপ। কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নকারী দেশগুলোর এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় কাতার বলছে, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই, তাদের এই সিদ্ধান্ত অন্যায্য ও অন্যায়। তারা এটি করতে পারেন না। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই বলতে শোনা যাচ্ছে যে, সৌদি আরবের নেতৃত্বেই কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে। সৌদির পরোক্ষ ইন্ধনেই সম্পর্ক ছিন্নের এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এজন্য এর গোটা দায় সৌদির। এখানে শেষোক্ত যে অভিযোগ সেটির ব্যাপারে আমি জানি না এবং এ ব্যাপারে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য কোনো প্রমাণ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে সৌদির নেতৃত্বে যে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রক্রিয়া প্রথমে শুরু হয়নি এটি নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকার কথা নয়। কেননা সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রক্রিয়া প্রথমে শুরু করে বাহরাইন। পরে সৌদি আরব, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিন্ন ভিন্নভাবে সম্পর্কচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়। তবে এ ঘটনার পেছনে যে পবিত্র আরবের অপবিত্র নর্দমা, বিশ্বের পতিতা রাষ্ট্র আরব আমিরাত জড়িত এটি বোধহয় এখন কিছুটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কেননা গত ২৫ মে, আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিটে কাতারের আমির শায়খ তামীম বিন হামাদ আল সানী আরব আমিরাতকে মুনাফিক হিসেবে সাব্যস্ত করে কড়া ভাষায় তার প্রতিবাদ করেন। তাৎক্ষণিকভাবে আমিরাত কোনো প্রতিবাদে না গেলেও কাতারের এই আচরণে চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয় দেশটি। যার ফলশ্রুতিতে প্রতিশোধ পরায়নে কাতর হয়ে কাতারের সঙ্গে ইরানের গোপন সম্পর্ক রয়েছে এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে সৌদি আরবকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।
লেখক: কলামিস্ট/সম্পাদনা: আশিক রহমান