গণআদালতের রায়ে নেত্রকোনাই প্রথম যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছিলো
গৌতম বাবুল, বিশেষ প্রতিনিধি : স্বাধীনতার উষালগ্নে ৭১ এর মানবতাবিরোধী অবরাধের বিচারের দাবিতে নেত্রকোনায় গঠিত গণআদালতের বিষয়টি দেশবাসীর কাছে আজো অজানা রয়েছে । মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রকাশনা অনুসন্ধানে জানা গেছে, নেত্রকোনায় ৭১ এর ১২ ডিসেম্বর গণআদালতের মাধ্যমে দালাল রাজাকারদের বিচার কার্যকর ঘটনাটি বাংলাদেশে প্রথম। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় দালল রাজাকাররা অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণ বিশেষ করে হিন্দুঅধ্যুষিত মাইলোরা, দেওথান, দৌলতপুর, খুরশীমুলসহ প্রায় ছয়টি গ্রামে পাচঁশতাধিক হিন্দুবাড়িতে ব্যাপক লুটপাট এবং বসতভিটা দালাল রাজাকাররা দখল করে নিয়েছিল। এবং ঐ সময়ে আব্দুল মমিন, গোলাম এরশাদুর রহমান, আব্দুল মজিদ ও হাজী বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি দালাল রাজাকাররা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর ৮ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্র বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মোহনগঞ্জ চতুর্দিকে গিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা ধ্বনি দিয়ে মোহনগঞ্জকে পাক সেনাদের তাড়িয়ে মোহনগঞ্জে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা বেশ কয়েকজন দালার রাজাকারদের হত্যা করে। নয়জন দালাল রাজাকারকে ধরে এনে থানা হাজতে আটকিয়ে রাখে। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে দালাল রাজাকারদের আটকের খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সম্্রাট এবং খালেক নামে দুই রাজাকার নেত্রকোনায় পালিয়ে আসে। দুই রাজাকারদের ধরতে মোহনগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা নেত্রকোনার মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিষয়টি জানায়। ৭১ এর বিএলএফ কমান্ডার তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরি এবং ছাত্রলীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা বাদল মজুমদার ঐ দুই রাজাকারকে আটক করে নেত্রকোনার থানা হাজতে আটকিয়ে রাখে। ৭১ এর ঘৃণিত এসব অপরাধীদের বিচারের জন্য গণ আদালতের প্রস্তুতি নিতে থাকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। অবশেষে বারই ডিসেম্বর রুইয়ার মাঠে ( বর্তমানে শহীদ উসমান পার্ক) হাজারো জনতার উপস্থিতিতে গণআদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এমপি ডা. আখলাখ হোসাইন আদালতের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।