শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবসে সংসদে অনির্ধারিত আলোচনা জনগণের অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনে দুঃশাসনের অবসান, এখন উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ
হাসান আরিফ : গণতন্ত্র ও উন্নয়নের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের কঠোর সমালোচনা করে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা বলেছেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কারারুদ্ধ করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এমনকি তাকে হত্যার চক্রান্তও হয়েছিল। কিন্তু জনগণের অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের মুখে সেই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। যার মধ্য দিয়ে দেশে দুঃশাসনের অবসান হয়। এরপর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার দক্ষ নেতৃত্বের কারণে দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। গণতান্ত্রিক বিশ্বের নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ।
গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশন অনির্ধারিত আলো[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশচনায় অংশ নিয়ে তারা এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে পয়েন্ট অব অর্ডারে এই আলোচনার সূত্রপাত করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। এই আলোচনায় আরও অংশ নেন অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, পংকজ দেবনাথ, ফজিলাতুন্নেসা বাপী, বেগম নুরজাহান বেগম, সাবিনা আক্তার তুহিন ও উম্মে রাজিয়া কাজল। আলোচকরা সকলেই বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এর আগে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সুধা সদন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হয়। বিশেষ আদালতে সেই মামলার বিচারও শুরু হয়।
অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করে তারানা হালিম বলেন, শেখ হাসিনার মুক্তির মধ্য দিয়ে দেশের গণতন্ত্রের মুক্তি পেয়েছে। দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটছে। এখন উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে দেশ চলছে। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা হাল ধরেছেন বলে নৌকা চলছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার পথে দেশ অগ্রসর হচ্ছে। অবশ্য এজন্য জননেত্রীকে অনেক জেল-জুলুম ও অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিজয়ী তিন বাঙালি কন্যাকে অভিনন্দন জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, পনের হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকী বিজয়ী হয়েছেন। টিউলিপের একাগ্রতা, কর্তব্য নিষ্ঠা ও ন্যায় পরায়ণতার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিবারের শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা কাজ করেছে। তিনি আরো বলেন, টিউলিপ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য নাতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য ভাগ্নি ও বঙ্গবন্ধু শেখ রেহানার যোগ্য সন্তান। যিনি বাঙালি জাতির ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছেন।
নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কাজ নির্বাচন। দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। এতে নাখোশ হয়েছিল সরকার। তাকে বিদেশ থেকে দেশে ফিরতে বাধা দিয়েছিল। সরকারের কথায় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ তার টিকিট বাতিল করেছিল। সরকারের হুমকি ছিল, দেশে ফিরলে গ্রেফতার করা হবে। পিতার ভাগ্যবরণ করতে হবে। কিন্তু শেখ হাসিনা পিছু পা হননি। মৃত্যুতে হাতের মুঠোয় নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। ১৯৮২ সালেও একইভাবে তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়।
তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অভিযান শুরু করলেও দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার না করে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হলো। অসংখ্য মামলা দেওয়া হলো। নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে মাইনাসের চেষ্টা করা হলো। তিনি আরো বলেন, কারাগারে শেখ হাসিনা ভোটার হতে চাইলে খালেদা জিয়া ভোটার হতে রাজি হননি। কারণ তিনি নির্বাচন চান না। তিনি নির্বাচনের বিরুদ্ধে সব সময় অবস্থান নিয়েছেন। এখনো নিচ্ছেন। এ বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।
গণমানুষের অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় বলে দাবি করেন সংসদ সদস্য ফজিলাতু নেসা বাপ্পি। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের শত্রু ও এক-এগারোর কুশীলবরা কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের মুহূর্তে জাতির উদ্দেশে লেখা ২২ লাইনের চিঠিতে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি আমৃত্যু জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। তিনি আরো বলেন, কারাগারে শেখ হাসিনার প্রতি নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে ভাঙা খাটে থাকতে দেওয়া হয়েছে। ইঁদুরে কাটা লেপ তোষক দেওয়া হয়েছে। খাবারে বিষ মিশিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের প্রতি অসীম সাহস ও জনগণের প্রতি দ্বায়বদ্ধতার কারণে সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, তার মুক্তির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি মুক্তি পেয়েছে। নবম ও দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশ এখন গণতান্ত্রিক বিশ্বের নেতৃত্বের আসনে বসতে পেরেছে।
সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেন, জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কোনো উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা যায় না, এটা শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন। ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার পরিকল্পনা হয়েছিল। তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু জনগণের অকৃত্রিম ভালোবাসা তাকে ফিরিয়ে এনেছে। তিনি মৃত্যুকে জয় করেছেন। বঙ্গবন্ধুর শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তিনি কাজ করছেন। ক্রিকেটে একের পর এক বিজয় প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপের কারণে সম্ভব হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, জনগণের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসার প্রতিদান পেয়েছেন শেখ হাসিনা। রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে গেলেও জননেত্রীর মুক্তির দাবি থেকে পিছু হটেনি দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তিনি আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা দিনের পর দিন বাচ্চার মুখ দেখতে পারেনি। বাচ্চা মায়ের দুধ খেতে পারেনি। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল নেত্রীর মুক্তি। এই দিনে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল।
গ্রেফতারের সময়ে দেশবাসীকে লেখা চিঠিটি পড়ে শোনান বেগম নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, এই চিঠি আমাদের কঠিন সময়েও আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করেছে। জনগণের প্রতি তার অঙ্গীকার কর্মীদের আরো সাহসী করে তুলেছে। যে কারণে আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এতে বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত হয়েছে।
উম্মে রাজিয়া কাজল বলেন, শেখ হাসিনার গ্রেফতারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের উপর দমন-পীড়ন চালিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যর্থ হয়। সরকার এক পর্যায়ে মিছিল-সমাবেশ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু নেতা-কর্মীদের দমিয়ে রাখা যায়নি। আন্দোলনের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, শেখ হাসিনা মুক্তি না পেলে দেশে গণতন্ত্র আসতো না। কোনো নির্বাচন হতো না। দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে আনা সম্ভব হতো না। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন অসম্ভব ছিল। এমনকি আইপিইউ ও সিপিএ-এর মতো সংস্থায় নির্বাচন কারো কল্পনায় আসতো না। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত কি বাঙালি কন্যা ও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানান। সম্পাদনা : ইয়াছির আরাফাত