কাতার সংকট : বাংলাদেশের যা করণীয়
আবু সাঈদ মো. নাজমুল হায়দার
সৌদি আরব ২০১৪ সালে কাতার থেকে তাদের কূটনৈতিক প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে সেখানে মদদদাতা হিসেবে কাজ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় কিছুদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। সৌদি আরব থেকে আসার পরপরই এ ধরনের একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশ। কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার মূল জায়গাটা তৈরি করেছে সৌদি আরব। ১৯৯৫ সালে গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিল সম্মেলনে কাতার ঘোষণা করেছিল তারা কখনো সন্ত্রাসীদের অর্থায়নে সাহায্য করবে না, আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে হস্তক্ষেপ করবে না, সন্ত্রাসীদের মদদদাতা হিসেবে কাজ করবে না। পাশাপাশি অন্যান্য রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো ধরনের শান্তি শৃঙ্খলা বিঘিœত হয় সেই ধরনের কোনো কাজ করবে না কাতার। এ ধরনের কথাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে সৌদি আরবের নেতৃত্বে ৬টি দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। কারণ কাতারের খাদ্যশস্য প্রধানত আমদানি নির্ভর। অধিকাংশ খাদ্যশস্য আসে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে। এক্ষেত্রে যদি তাদের বর্ডার সিলগালা করে দেয় তাহলে কাতার তো একটু সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবে। কাতারের সঙ্গে ইতোমধ্যে সব ধরনের সম্পর্ক যেমন আকাশপথ, স্থল, জলপথ ছিন্ন করেছে এই সকল দেশগুলো। এই ক্ষেত্রে খাদ্যদ্রব্যের সংকট তো সেখানে হবে এটা খুব স্বাভাবিক। আশা করি কাতারের সমস্যা বেশিদিন থাকবে না। ইতোমধ্যে কুয়েত সেখানে মধ্যস্থকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কুয়েত চাচ্ছে এই সমস্যা উদারতা, সততা সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করার। এক্ষেত্রে সংকটটা আরও তাড়াতাড়ি সমাধান হতো যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করত। কিন্তু সেখানে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র পরোক্ষভাবে মদদ দিচ্ছে এই দেশগুলোর পক্ষে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি চিন্তা করি বাংলাদেশের অনেক বড় শ্রমবাজার হচ্ছে সৌদি আরব। সেখানে আরেকটি বড় শ্রমবাজার হচ্ছে কুয়েত। শ্রমবাজার হিসেবে যুক্ত হয়েছে কাতারও। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচিত হবে ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করা, কারোর পক্ষাবলম্বন না করা। বাংলাদেশকে সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আসলে বিষয়টা কি ঘটেছে, বর্তমানে কি ঘটছে সেই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা। কাতারে যে সমস্ত বাংলাদেশি রয়েছে তারাও কিছুটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। তারাও সেখানে খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন সকালে যে জিনিসের দাম ৩ রিয়াল বিকেলে বেড়ে হয়েছে ৫ রিয়াল। এক্ষেত্রে কাতারে কিছুটা সাময়িক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এসব সার্বিক বিষয় মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার, সরকারের পররাষ্ট্র কমিশনে যারা রয়েছেন তারা সক্ষমতার সঙ্গে, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে আশা করছি। বাংলাদেশি শ্রমিক যারা কাতারে রয়েছেন তাদের সেখানে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে কিনা এক্ষেত্রে কাতারে বাংলাদেশি দূতাবাসে কর্মরত যারা আছেন তাদেরকে মানসিকভাবে সমর্থন করে বিষয়টি কাটিয়ে উঠবেন। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যবেক্ষণ করছে এটা নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আশা করি, বিষয়টা কূটনৈতিক পর্যায়ে তাড়াতাড়ি সমাধান হয়ে যাবে।
পরিচিতি: সহকারী অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত গ্রহণ: ফাতেমা-তুজ-জোহরা
সম্পাদনা: আশিক রহমান