আইএমএফের আর্টিকেল ফোর প্রকাশ সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে বাজেট ঘাটতি না মেটানোর পরামশ
হাসান আরিফ : মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে বাংলাদেশকে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং বিধি প্রণয়নের চর্চা ও প্রতিষ্ঠানিক সংস্কার আনতে হবে। সেক্ষেত্রে দেশের অব্যবহৃত ব্যাপক সঞ্চয়ের সুযোগ ব্যবহার করে দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তাই সামাজিক সুরক্ষার কৌশল হিসেবে উচ্চমূল্যের সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে বাজেট ঘাটতি মেটানোর চর্চা থেকে সরে বিকল্প উপায় বের করতে বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
আইএমএফ প্রকাশিত আর্টিকেল ফোর মিশনের বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যালোচনার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই পরামর্শ দিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক এই সংস্থার পরিচালনা পর্ষদ। গত মার্চে দুই সপ্তাহের ঢাকা সফর শেষে ব্রায়ান এইটকেনের নেতৃত্বে আইএমএফ মিশনের পর্যালোচনার ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি বাজেটে অর্থায়নের উৎস হিসেবে উচ্চ ব্যয়ের জাতীয় সঞ্চয়পত্রের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা কমিয়ে ফেলতে পরামর্শ দিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। অর্থবাজারের যাতে ক্ষতি না হয় এবং সরকারের সামাজিক সুরক্ষার কৌশলও যাতে অর্জিত হয়, সেভাবে উন্নততর লক্ষ্যাভিমুখী ও স্বল্প ব্যয়ের বিকল্প বিবেচনা করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
মিশনের পর্যালোচনায় বলা হয়, উচ্চ সুদের সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানোর বিষয়টি আর্থিক খাতের আধুনিকায়নের পথে বড় বাধা।
এদিকে ব্যাংক আমানতের সুদের হারের সঙ্গে ব্যবধান নামিয়ে আনতে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার দুই মাসের মধ্যে কমানো হবে বলে চলতি মাসের শুরুতেই জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে। অন্যদিকে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার ১১ থেকে ১২ শতাংশের মতো। বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গড়ে ২ শতাংশ করে কমিয়েছিল সরকার। দুই বছর পর আরেক দফা কমানো হচ্ছে।
বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল, যার মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৬৯ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা করা হয়েছে। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা ৪৫ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার কথা জানান অর্থমন্ত্রী।