শহরমুখী গ্রামের মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি বৈশ্বিক সমস্যা
রাশেদা কে. চৌধুরী
অবকাঠামো খাত উন্নয়নের ফলে গ্রামের সঙ্গে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হয়েছে। জীবনের নানা চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলে শহরে গ্রামের মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যার কারণে শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা মানুষের মাঝে দিন দিন বাড়ছে। শহরে বৃদ্ধি পাওয়া মানুষের সংখ্যা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোনো জেলার নয়, সারাদেশ থেকেই মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। মানুষের এই শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা গ্রামে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিন দিন কম যাচ্ছে। যদিও গ্রামগুলোতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি চাষাবাদের জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে শহরে শিক্ষার পরিবেশ ও পড়ালেখার মান অনেক ভালো। আবার পড়ালেখা শেষ করে কর্মসংস্থানের জন্য শহরমুখী হচ্ছে। বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে ফসলের ক্ষতি, বন্যা ও নদী ভাঙনের কারণেও মানুষের মাঝে শহরমুখীর প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। একদিকে গ্রামে কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা কম। আবার গ্রামের মানুষের শহরমুখী প্রবণতার কারণে শহরগুলোতে জনসংখ্যার জট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে স্থানীয় প্রশাসন জনসংখ্যার বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে সমস্যা আরও সমস্যার সৃষ্টি করছে। মূলত গ্রামের জনসংখ্যার শহরমুখীর প্রবণতা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সারা পৃথিবীতেই শহরমুখী মানুষের ভিড় বাড়ছে।
নগরায়নের ফলে মানুষ শহরমুখী হয়ে থাকে। নগর মানেই তো নাগরিক সুবিধা দেওয়া। কিন্তু আমরা নগরায়নের পাশাপাশি নগরগুলোর পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারছি না। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা নাগরিকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে না পারায় ফলে সমস্যা আরও জটিল রূপ ধারণ করছে। আমাদের দেশের নগরীগুলোতে সমস্যা তীব্র আকার রূপ নিয়েছে। এ সমস্যার অন্যতম কারণ জনসংখ্যা অনুপাতে ভূমির সংকট। আমাদের পর্যাপ্ত ভূমি না থাকা এবং দিন দিন ভূমির পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে শহরমুখী মানুষকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
গ্রামের মানুষকে শহরমুখী প্রবণতা ঠেকাতে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। তবে এ বিষয়টি যত সহজে বলা যায় বাস্তবায়ন করা ততটাই কঠিন। কেননা আমাদের ভূমির পরিমাণ ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। তাহলে গ্রামের মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কোথায় হবে?
কর্মসংস্থান যদিও ভূমি ও কৃষিভিত্তিক হবে না। কিন্তু কৃষির উপর নির্ভরশীল আরও অনেক ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকা- আছে। সেগুলোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আমাদের আরও বেশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি করা যেতে পারে। বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। যারা স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে মানুষের জন্য। অন্যদিকে নগরায়নের ঝুঁকিগুলো কমানো বা পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। আবার স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে প্রশাসনিক কাঠামো বিকেন্দ্রীকরণ করে শহরমুখী মানুষের জনসংখ্যার চাপ কমানো যেতে পারে। অর্থাৎ শহরের নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রামেও বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে করে মানুষ শহরের সুবিধাগুলো গ্রামে বসেই পেতে পারে। তাহলে শহরে মানুষের চাপ কমবে।
পরিচিতি: শিক্ষাবিদ
মতামত গ্রহণ: বায়েজিদ হোসাইন/সম্পাদনা: আশিক রহমান