দরিদ্র মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়বে
রাজেকুজ্জামান রতন
ঈদে ভিজিএফ কর্মসূচি বাতিল ও রাজধানীতে ওএমএস বন্ধ ঘোষণা এবং সরকারের কর্মকা-ের মধ্যে যে বিরাট অসঙ্গতি তার একটা প্রমাণ। সরকার বলছে, দেশে চালের কোনো সংকট নেই। জনগণের কোনো সমস্যা হবে না। অথচ চালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ৪৮ টাকার নিচে মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থতিতে, ঈদের আগে রাজধানীতে ওএমএস বন্ধ করা হয়েছে, আবার ভিজিএফ কার্ডের যারা সুবিধাভোগী, যারা খুবই দরিদ্র মানুষ তাদের এ গ্রুপ ফিডিংটাও বন্ধ করার চেষ্টা করছে। একমাস আগেই সরকার বলল যে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত চালের মজুত আছে। তাহলে আমরা সরকারের কোন কথাটা সত্য মনে করব। মানে আমাদের মন্ত্রণালয়গুলো কি একটা দায় দায়িত্বহীন কথা বলার প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি হয়েছে যে, যেখান থেকে একেক সময় একেক রকম কথা বলা হবে। জনগণ একবার শুনল যে তাদের কোনো সংকট নেই। আরেকবার শুনছে যে, চাল নেই বলে ভিজিএফ কার্ড বাতিল। চালের এই ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে দরিদ্র মানুষদের বাঁচানোর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ দরকার, তখন আমাদের চার লাখ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে রাষ্ট্র আত্মতুষ্টিতে আছে। অথচ এই সময়েই দরিদ্র মানুষদের জন্য যে সীমিত পদক্ষেপ সেটাও অর্থ বছরের শেষ পর্যায় এসে বাতিল করে দেওয়া হলো। এখন যে চালটা দেওয়া হবে, যে টাকাটা দেওয়া হবে সেটা কিন্তু গত বছরের বরাদ্দ। সেটা তো এই বাজেটের বরাদ্দ নয়। গত বাজেটে তো সেই বরাদ্দটা ছিলই। সেটা গেল কোথায়? ফলে আমরা মনে করি এই ঘোষণা এবং বাস্তবায়নের মাঝখানে যে বিরাট অসঙ্গতি সেটার মূল কারণ হলো কোনো ধরনের দায়িত্বই অনুভব করে না সরকার। ঘোষণা দেওয়ার ক্ষেত্রেও কোনো দায়িত্ব অনুভব করা হয় না। আর বাস্তবায়ন না করলেও কোনো জবাবদিহিতা অনুভব করেন না কর্তৃপক্ষ। ফলে দায়িত্বহীনতা এবং জবাবদিহিতা দুটোর বহিঃপ্রকাশই হচ্ছে দরিদ্র মানুষদের সাম্প্রতিক কষ্ট বাড়ানোর এই পদক্ষেপ। এবং এতে করে দরিদ্র মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। দেখা যাবে যে এই অজুাহাতে চালের দাম আরও বেড়ে যাবে।
ভিজিএফ কার্ড তো দেওয়া হতো বিনামূল্যে দরিদ্র মানুষদের। যেটা বিনামূল্যে দেওয়া হতো সেটার রিপ্লেসমেন্ট তো ১০ টাকা দামের চাল নয়। ১০ টাকা দামে চাল সেটা তো ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র। আর ভিজিএফ দেওয়া হতো বিনামূল্যে। গত বছর ঈদুল ফিতরের সময় প্রায় ৮৮ লাখ দুস্থ পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল সরবরাহ করেছিল সরকার। ফলে এ বছর ঈদের আগেও যেটা করবে। সেই মজুদটা সরকারের থাকতে হবে না? সরকার একটা অপরিকল্পিত কাজ করছে না? সরকারের তো সম্পূর্ণ পরিকল্পনার মধ্যে থাকা উচিত। আমরা মনে করি, উৎসবের সময় যেকোনো জিনিসেরই দাম বেড়ে যায়। তার সঙ্গে খাদ্যের জন্য যদি আবার বেশি ব্যয় করতে হয়। তাহলে দরিদ্র মানুষের জীবনটা আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়বে।
পরিচিতি: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাসদ
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ/সম্পাদনা: আশিক রহমান