ইসরায়েলি পত্রিকা হারেতজ’এর প্রতিবেদন, সিসি,নেতানিয়াহু ও হারজগের গোপন বৈঠক হয় কায়রোতে
রাশিদ রিয়াজ : ইসরায়েলের একাধিক পত্রিকা বলছে, মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল-সিসি গত বছর এপ্রিলে কায়রোতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও বিরোধীদলীয় নেতা আইজাক হারজগের সঙ্গে এক গোপন বৈঠকে বসেছিলেন। ওই বৈঠকেই ইসরায়েলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ইসরায়েলি পত্রিকা হারেতজ, টাইমস অব ইসরায়েলে ও আল-জাজিরা এ সংবাদ জানিয়েছে। বেশ কয়েকটি আরব দেশের পক্ষ থেকে কায়রোতে ওই বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেন জেনারেল সিসি এবং ইসরায়েলে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন নিয়েও নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি ও হারজগের জায়নিস্ট ইউনিয়ন পার্টির মধ্যে আলোচনা হয়। ইসরায়েলের পরিকল্পিত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নেতানিয়াহুর ডানপন্থি দল লিকুদ পার্টির পক্ষে একা সম্ভব নয় এবং এজন্যে আইজাক হারজগের দলের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়।
কায়রোর ওই গোপন বৈঠকের আগে একই বছর ফেব্রুযারিতে আরেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় জর্ডানের বন্দর শহর আকাবায়। হারেতজ বলছে এ গোপন বৈঠকে যোগ দেন মিসরের প্রেসিডেন্ট জেনারেল সিসি, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ। ইসরায়েলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছিল এ বৈঠকের আলোচ্যসূচি।
হারেতজকে আকাবা সামিটের একটি সূত্র জানিয়েছে নেতানিয়াহু চান জর্ডান, মিসর একটি আঞ্চলিক উদ্যোগ নিক যেখানে ইসরায়েলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেওয়ার বিষয়টি আহবান জানানো হবে। এ উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে মার্কিন প্রশাসনও। নেতানিয়াহু আরো বলেন, এধরনের আঞ্চলিক উদ্যোগে সৌদি আর
ব, সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ অন্যান্য সুন্নি আরব দেশগুলো যোগ দিক। এসময় নেতানিয়াহু মার্কিন প্রশাসনের কাছে বড় ধরনের বসতি ব্লক নির্মাণে সমর্থন চান। বর্তমানে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের দখলকৃত ভূমিতে এধরনের বসতি ব্লক নির্মাণে ২০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বিশাল নির্মাণ কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে।ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আরেকটি দাবি করেন যে, মার্কিন প্রশাসন যেন জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনে ইসরায়েল বিরোধী যে কোনো সিদ্ধান্তের ওপর হস্তক্ষেপ করে। একই সঙ্গে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের পক্ষেই ভেটো প্রয়োগ করে। তবে কায়রোতে গোপন বৈঠক হলেও নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি নেতাদের কোনো দাবি মেনে না নেওয়ায় ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। নেতানিয়াহুর কোয়ালিশন সরকার ইসরায়েলের বিরোধী দল আইজাক হারজগের সঙ্গে কথাবার্তা ভেস্তে যায়। এরপর গত বছর মে মাসে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগডর লিবারম্যানের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেন।
তবে গত সোমবার হারেতজ’এর এ প্রতিবেদনে এসব বৈঠকে ফিলিস্তিনের কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন কি না তা উল্লেখ করা হয়নি। কিংবা ফিলিস্তিনের কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত থাকলেও নেতানিয়াহুর কোনো দাবি মেনে নিয়েছেন কি না তারও কোনো তথ্য নেই। টাইমস অব ইসরায়েল বলছে, তবে ইসরায়েলি বিরোধীদলীয় নেতা আইজাক হারজগ বলেন, কায়রোতে এধরনের গোপন বৈঠক মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এধরনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে ইসরায়েলের বিরোধীদল। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসিকে ওই গোপন বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্যে ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। ইসরায়েল সিসিকে তার বৈঠকে আগ্রহ ও যোগদানের জন্যে ধন্যবাদ জানায়। জেনারেল সিসি ইসরায়েলের পক্ষে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনার জন্যে যে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছেন, আরব দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন তারও প্রশংসা করে ইসরায়েল। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব সফর ও আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলকে নিয়ে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ মিসরে ওই গোপন বৈঠকের ফলশ্রুতি বলে মন্তব্য করা হয়েছে টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে।