বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে নতুন জীবন দিয়েছে
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : আমিনুল ইসলামের আর্থিক কষ্টের দিন প্রায়ই দূর হয়েছে। নিয়মিত আয়ের পথ খূঁজে পেয়ে তার জীবনের অনিশ্চয়তাও কেটে গেছে। গত মার্চে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার পর তিনি জাহানাবাদ বাজারে ওয়েল্ডিং এর কাজ শুরু করেন। – বাসস
এর আগে মোহনগঞ্জ উপজেলার পূর্বাপাড়া গ্রামের ৩০ বছরের আমিনুল অন্যের ওয়েল্ডিংয়ের দোকানে দিন মজুর হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু সীমিত আয়ে তিনি তার চার সদস্যের পরিবারকে ভালোভাবে চালাতে পারতেন না।
সমস্যা কাটিয়ে ওঠার পর এখন তিনি প্রতি মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করেন। সংসারের খরচ বাদ দেওয়ার পরও প্রতিদিন কিছু সঞ্চয়ও করতে পারেন। একটি বিদ্যুৎ সংযোগ তার জীবনে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। আমিনুলের মতো চারঘাট উপজেলার সারদা ইউনিয়নের চক ঝিকরা গ্রামের সুফিয়া বেগম,রবিউল ইসলাম ও মারুফা বেগম এবং খারদাগোবিন্দপুর গ্রামের আসমা বেগম ও মকবুল হোসেন আরো অনেকই বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই পোলট্রি খামার, ক্ষুদ্র ব্যবসাসহ বিভিন্ন আয় উপার্যনের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেছেন।
আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (আরপিবিএস) পবা, মোহনপুর, দুর্গাপুর, তানোর এবং গোদাগাড়ি উপজেলায় ১৯৯৬ সাল থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করে আসছে।
আরপিবিএস এই পর্যন্ত ৪ হাজার ২৮৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইনের মাধ্যমে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭২টি গ্রাহক সংযোগ দিয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭১৬টি গৃহ সংযোগ, ২ হাজার ৭৬৮টি সেচ পাম্প, ৮ হাজার ৮৪১টি বাণিজ্যিক সংযোগ, ১ হাজার ১১২টি শিল্প কারখানা এবং ৩ হাজার ২৮৯টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে সংযোগ দিয়েছে। এ ছাড়া, আগামী বছর জুনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার অনুযায়ী শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকল উপজেলাকে বিদ্যুৎ বিতরণের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। আরপিবিএস এর মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, আগামী জুনের মধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলায় বিদ্যুতায়িত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরের মধ্যেই পবা ও দুর্গাপুর উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। আর মোহনপুরকে জুনের মধ্যে ও তানোর উপজেলাকে ডিসেম্বরের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় এবং গোদাগাড়ি উপজেলাকে আগামী বছর জুনের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে।
আরপিবিএস এর মহাব্যবস্থাপক বলেন, মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের গতি বৃদ্ধিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অপরিহার্য এবং এর কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য বর্তমান সরকার এই খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে এবং বিদ্যুতের উন্নয়নে ব্যাপক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
প্রকৌশলী হক বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যুৎ সেবা প্রদানের মাধ্যমে জেলার কৃষি, শিল্প ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (আরপিবিএস) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আরপিবিএস কর্তৃক পরিচালিত গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত গ্রামীণ এলাকার আর্থসামাজিক কাঠামো উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
এদিকে, যৌক্তিক মূল্যে জনসাধারণের মাঝে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। নর্থ জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের সহকারী প্রধান প্রকৌশলী খালেদা ইয়াসরিবা লিমা বলেন, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় আমাদের ভোক্তা পর্যায়ে ৭ লাখ ৩০ হাজার সংযোগ এবং ১৯ হাজার ৫শ’ সেচ পাম্পের সংযোগ রয়েছে। যা ২০০৯ সালে ছিল ৩ লাখ ৯৮ হাজার এবং ১৭ হাজার ৫৫০টি। এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৮১৪ কিলোমিটার লাইন ১০১২ গ্রিডের সাব-স্টেশনের মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে।
সিস্টেম লস ১৪ দশমিক ৬৫ থেকে কমিয়ে ১০ দশমিক ৫০ এ আনা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নের অংশ হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর ধীরে ধীরে ক্রমবর্ধমান চাপ কমানোর জন্য বসতবাড়িতে ৪০ হাজার সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে বলে প্রকৌশলী লিমা জানান। সম্পাদনা : হাসান আরিফ