এ মাসে তাকওয়া অর্জন হবে তো?
রুহুল আমিন ভূঁইয়া : রমজান সিয়াম সাধনার মাস। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন হয়। রমজান মোমিনকে তাকওয়ায় ঋব্ধ করে। রোজা মানুষকে তাকওয়ায় প্রশিক্ষিত করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়াবান হতে পারো।’ প্রতিটি মানুষ পৃথিবীতে আসে নিষ্পাপ অবস্থায়। তার ভালো-মন্দের ভেদবুদ্ধি হওয়ার পর থেকে শয়তান চেষ্টা করে তাকে পাপ ও অন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে।
আল্লাহর ভয়ে শয়তানের অনুসরণ ও কুমন্ত্রণা থেকে বিরত থাকাই তাকওয়া। তাকওয়া এমন এক আমল, যা চাইলেই করা যায় না। এর জন্য প্রয়োজন আল্লাহর রহমতের সঙ্গে নিরন্তর প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায়। রমজানের সিয়াম সাধনা মানুষকে আল্লাহ ভীতির চেতনায় শাণিত হয়ে শয়তানের মন্ত্রণা প্রতিরোধের সে শক্তিতেই বলীয়ান করে ; সে শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করে। এ জন্যই নবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজা হচ্ছে ঢাল, যা দ্বারা মানুষ গোনাহ থেকে আত্মরক্ষা করে।’ রোজা রেখে কেউ যদি তাকওয়ার প্রশিক্ষণ কাজে না লাগায়, তবে সে রোজা নিষ্ফল। নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মিথ্যার মাধ্যমে আমল করা ও মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারেনি, তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ যখন কোনো ব্যক্তি সিয়াম অবস্থায় কোনো পাপাচারের ইচ্ছা করে তৎক্ষণাৎ যেন স্মরণ করে যে, সে সিয়াম পালনকারী। তাহলে তার জন্য পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা সহজ হবে।
এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) সিয়ামরত ব্যক্তিকে এ কথা বলতে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়, তাহলে সে যেন বলে, ‘আমি সিয়াম পালনকারী ব্যক্তি।’ এটা সাওম পালনকারীকে সাবধান করার জন্য যে, তাকে গালাগাল থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ; আর তাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, সে সাওম পালনরত অবস্থায় আছে। সুতরাং তাকে কটূক্তি ও গালাগালের জবাব প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। আমাদের সব ধরনের রিপু ও কামনাকে রোজা প্রশিক্ষিত করে আল্লাহর ভয়ে ভীত হতে। এ কারণেই প্রখ্যাত সাহাবি জাবের (রা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি রোজা রাখবে তোমার কর্ণ, চক্ষু, জিহ্বাও যেন মিথ্যা কথা ও সব হারাম বর্জনের মাধ্যমে রোজা পালন করে। তুমি প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকো। অবশ্যই তুমি আত্মসম্মান ও প্রশান্ত ভাব বজায় রাখবে। আর তোমার রোজার দিন ও রোজাবিহীন দিন যেন সমান না হয়। তাকওয়ার চেয়ে অধিক মর্যাদাবান কোনো কাজ নেই।
এটা মানব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের মূল ভিত্তি হলো তাকওয়া। আর রমজান মাসেই তাকওয়া অর্জনে ব্রত হওয়া প্রতিটি মুমিনের একান্ত কর্তব্য। মনে রাখতে হবে আল্লাহর প্রিয় পাত্র হতে হলে তাকওয়ার বিকল্প নেই। তাকওয়া দেখানো কোনো বিষয় নয়: বরং এর জায়গা হচ্ছে মুমিন আত্মা। রাসূল (সা.) তার সীনা মোবারকের দিকে নির্দেশ করে বলেছিলেন, তাকওয়া হলো এখানে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে ব্যক্তি যে মুত্তাকি তথা তাকওয়াবান।