সদকাতুল ফিতর : ফাজায়েল ও মাসায়েল
আহমদ আবদুল্লাহ
রোজাদার ব্যক্তি নিজেকে সংযত রাখা সত্ত্বেও মাঝেমাঝে ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাবশত তার থেকে ভুলভ্রান্তি হয়ে যায়। খাওয়াদাওয়া এবং রোজা বিনষ্টকারী বিষয়বস্তু থেকে বিরত থাকা তো সহজবোধ্য, কিন্তু অনর্থক কথাবার্তা ও অশ্লীল বাক্য এবং অশালীন আচরণ ইত্যাদি থেকে পুরোপুরিভাবে বিরত থাকা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ জন্য মহান রাব্বুল তার প্রিয় বান্দা-বান্দির জন্য সুন্দর আয়োজন করে রেখেছেন রমজান শেষে। আর তা হল, ‘সদকাতুল ফিতর’। এ সদকায় ফিতরের মাধ্যমে রোজার ভুলগুলি মার্জনা হয়ে যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হুজুর (সা.) সদকায় ফিতর আদায় করার জন্য খুব তাকীদ দিয়েছেন, যা অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোযার যে ক্ষতি তা দূরীকরণ এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর মাধ্যম। সুতরাং যে ব্যক্তি তা ঈদের পূর্বে আদায় করে, তাহলে তা মাকবুল যাকাত হবে। আর যদি ঈদের পর আদায় করে তাহলে তা সাধারণ সদকা হবে। (আবু দাউদ: ১৬০৯) উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা গেল, সদকায় ফিতর ওয়াজিব হওয়ার দু’টি উদ্দেশ্য। প্রথমত রোজার মধ্যবর্তী সময়ে ভুল ত্রুটির ক্ষতিপূরণ। দ্বিতীয়ত অসহায় মিসকিনদের জন্য ঈদের দিন রিজিকের বন্দবস্ত। যাতে সেও সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারে। আর এ জন্যই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অসহায় নিঃস্বদের পিছনে এ পরিমাণ ব্যয় করো যেন তারা এদিনে অন্যের কাছে চাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) ঈদের তিনদিন পূর্বে সদকায় ফিতর আদায় করতেন। যাতে অসহায় পথশিশুরা ঈদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারে।
সদকায় ফিতর কার ওপর ওয়াজিব: যার কাছে প্রয়োজনীয় সম্পদ ব্যতীত এ পরিমাণ ধনসম্পদ থাকে, যা থেকে জাকাত দেওয়া ওয়াজিব। এমন ব্যক্তির জন্য সদকায় ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। জাকাতের পরিমাণ হল, ‘রূপা ৫৯৫ গ্রাম (৫২.৫০ভরি) কিংবা স্বর্ণ ৮৫ গ্রাম (৭.৫০ ভরি) অথবা স্বর্ণ বা রূপা যে কোন একটির নিসাবের মূল্য পরিমাণ অর্থ-সম্পদ বা ব্যবসায়িক সামগ্রীকে জাকাতের নিসাব বলে।’ সুতরাং কোন ব্যক্তির কাছে মৌলিক প্রয়োজন পূরণের পর যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ তার মালিকানায় থাকে এবং চন্দ্র মাসের হিসাবে এক বৎসর তার মালিকানায় স্থায়ী থাকে তাহলে তার ওপর এ সম্পদ থেকে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত রুপে প্রদান করা ফরয। সদকায় ফিতর ও জাকাতের ভেতর সামান্য পার্থক্য রয়েছে। জাকাতের ক্ষেত্রে সম্পদ মালে নামি অর্থাৎ বৃদ্ধিপ্রায় এমন সম্পদ হতে হবে। কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে এমনটি নয়। জাকাতের সম্পদ পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হতে হয়, কিন্তু সদকাতুল ফিতর তাৎক্ষণিক ওয়াজিব হয়। উভয়ের ক্ষেত্রে সম্পদ ঋণ থেকে মুক্ত ও প্রয়োজনীয়াতিরিক্ত হতে হবে। ( তাহতায়ী: ৩৯৪)
অপ্রাপ্ত সন্তানের পক্ষ থেকে সদকায় ফিতর:শিশুর সদকায় ফিতর পিতা পক্ষ হতে আদায় করা ওয়াজিব। আর যদি সন্তান নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাহলে তার সম্পদ থেকে সদকায় ফিতর আদায় করতে হবে। এমনিভাবে পাগল সন্তানের সদকায় ফিতরের বিধানও। ( ফতওয়া আলমগির: ১/১৯২)
প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের পক্ষ থেকে সদকায় ফিতর : সন্তানের প্রাপ্তবয়স হওয়া পর পিতার পক্ষ হতে সদকায় ফিতর আদায় করা ওয়াজিব নয়। তবে পিতা যদি সন্তানের পক্ষ হয়ে আদায় করে দেন, তাহলে তা আদায় হয়ে যাবে। তদ্রƒপ স্বামী স্ত্রীর সদকায় ফিতর আদায় করেন, তাহলেও তা হয়ে যাবে। চাই স্ত্রী এ বিষয় স্ত্রী থেকে অনুমতি নিক কিংবা তার অজান্তে হোক। (দুররে মুখতার: ৩/২৮৫)
এ বছরের সদকায় ফিতরের পরিমাণ ৫০ টাকা। সুতরাং উত্তম হল, এক ব্যক্তির সদকায় ফিতর একব্যক্তিকে দেওয়া। কেননা একব্যক্তির সদকায় ফিতর কয়েকজনকে দেওয়া মাখরুহে তানিজিহি। তবে একাধিক সদকায় ফিতর একব্যক্তিকে দেওয়া বৈধ। (ফতওয়া আলমগির: ৩/২৯১)