কাতার কেন টার্গেট?
সৈয়দ রশিদ আলম
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এমনিতেই অনৈক্যের মধ্যে ডুবে আছে দীর্ঘদিন থেকে। সিরিয়া ও ইরাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দেশ দুটিকে নরকে পরিণত করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে অন্যতম ধনী ও উদার দেশ হিসেবে কাতারের সুনাম রয়েছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের শিয়াবিরোধী ও ফিলিস্তিন আন্দোলনের চালিকাশক্তি হামাসকে কোনোভাবেই সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সহ্য করতে পারে না। তার কারণ হামাসের একাধিক নেতা কাতারে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন। কাতারের আলজাজিরা টিভি চ্যানেল বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। এই চ্যানেলটি রাজতন্ত্রের অনেক নোংরামি তুলে ধরে, সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের অনেক গোপন পরিকল্পনা প্রকাশ করে দেয়। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ দীর্ঘদিন থেকে আলজাজিরা টিভি চ্যানেলকে টার্গেট করে এসেছে। এর মধ্যে সৌদি আরবের নেতৃত্বে একটি মুসলিম সামরিক জোট গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এই জোটে ইরানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ, এই মুসলিম সামরিক জোটটি তৈরি হওয়ার মূল কারণ শিয়া বিরোধিতার নামে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করা।
এর মধ্যে কাতার ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তার প্রাকৃতিক সম্পদ একাধিক দেশে রপ্তানি করছে। যেহেতু কাতার নিজস্ব উদ্যোগে প্রাকৃতিক সম্পদ রপ্তানি করছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনকারী সংস্থা কাতারের উপরে নাখোশ রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম পছন্দের দেশ হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নেওয়ার পর থেকে সবাই ভেবেছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে আগুন জ্বলে উঠবে, ঠিক তাই হলো। কাতারের শাসকরা সৌদি আরবের বা যুক্তরাষ্ট্রের চোখ রাঙানিকে যেহেতু গুরুত্ব দেন না, সে কারণে দীর্ঘদিন থেকে কাতারের উপর দেশ দুটির ক্ষোভ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাধিক পছন্দের প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা কাতারের প্রাকৃতিক সম্পদের দিকে শকুনের দৃষ্টি দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে নজরদারি করে আসছেন। যে পর্যন্ত কাতার ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার অনুগত সৌদি বাদশাহর দাসত্ব শুরু না করবেন ততদিন পর্যন্ত কাতারের উপর একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকবে।
সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান ব্যক্তিগতভাবে রুক্ষ প্রকৃতির মানুষ। অনেকটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো, যে কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সালমান বিন আব্দুল আজিজের এত প্রেম। বলা হচ্ছে সৌদি বাদশাহ আরব অঞ্চলে নতুন করে দানবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছেন। তিনি সৌদি বাদশাহ থেকে অনেকটা ফেরাউন নমরুদের মতোন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে যাচ্ছেন। কিন্তু তার জানা নেই একদিন তাকেও আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে। কোনো স্বৈরাচারী আজীবন কোনো দেশ চালাতে পারেননি। প্রতিবেশী দেশের উপর যারাই অত্যাচার চালিয়েছেন তারাই নিজেরাই ধ্বংস হয়েছেন।
লেখক: কলামিস্ট/সম্পাদনা: আশিক রহমান