ভূমিধস ঠেকানোর উপায়
মো. এমদাদুল হক
ভূমিধস মূলত দুটো কারণেই হয়ে থাকে। প্রথমত প্রাকৃতিক কারণ এবং অন্যটি মনুষ্যসৃষ্ট কারণ। প্রাকৃতিক কারণটা স্বাভাবিকভাবে, এমনটি হয়েই থাকে সব জায়গাতে। প্রাকৃতিক কারণ বলতে আমরা যেটা বুঝে থাকি সাধারণত ভূমির উপরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে যা বৃষ্টির পানি পড়লেই মূলত ভূমিধস হয়ে থাকে। বৃষ্টির পানিতে ভূমি দুর্বল হয়ে যায়, তার বন্ধনটা দুর্বল হয়ে যায় সেদিক থেকে তার ভেঙে পড়ার প্রবণতা তৈরি হয়। মনুষ্যসৃষ্ট কারণ হলো, মানুষ পাহাড়ের ঢাল কেটে ফেলে। ঢাল কেটে ফেলাতে পাহাড়ের ঢাল খাড়া হয়ে যায়। যারা ওই এলাকায় বসবাস করে তারা বাড়ি তৈরি করার জন্য কেটে ফেলে বা রাস্তা তৈরি করার ফলে পাহাড়ের ঢাল কেটে এটাকে খাড়া করে ফেলে তখন ওই ঢালটা যত খাড়া হয়ে যায় তত ভেঙে পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত তো হবেই, এটাকে রোধ করার কোনো উপায় নেই। বৃষ্টিপাতের পরও পাহাড় যুগ যুগ ধরে টিকে থাকে। পাহাড় কাটাই হলো এখানে মূল সমস্যা। এটাকে রোধ করতে হলে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যারা কর্র্র্তৃপক্ষ, নগরায়ণ দেখা-শোনা করেন, পরিবেশ দেখা-শোনা করেন তাদেরকেই এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পদক্ষেপগুলো এমন হতে হবে যেন ওইসব এলাকায় যারা বসবাস করেন তারা ঘর-বসতি তৈরি না করে, যাতে পাহাড়ের পাশ কেটে না ফেলে।
অন্যদিকে আমাদের পরিবেশ অধিদফতর এবং নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যদি এই বিষয়গুলো সঠিকভাবে দেখাশোনা করে, কেউ যাতে পাহাড়ের ঢাল কেটে বসতি স্থাপন না করেন, রাস্তাঘাট তৈরি করার সময় এমনভাবে পাহাড় কাটতে হবে যেন ঢাল খাড়া না হয়, সেই বিষয়গুলো নজরদারি করতে হবে। এতে অন্তত ভূমিধস ৮০% রোধ করা সম্ভব হবে। ২০% তো প্রাকৃতিকভাবেই হয়ে থাকবে। যেমন স্বাভাবিকভাবেই অনেক পাহাড় খাড়া থাকে সেগুলো ভেঙে পড়বেই। সঠিক ব্যবস্থাপনা যদি আমরা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারব।
পরিচিতি: প্রফেসর, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মতামত গ্রহণ: ফাতেমা-তুজ-জোহরা
সম্পাদনা: আশিক রহমান