পাহাড় রক্ষায় কঠোর আইনি উদ্যোগ সময়ের দাবি
গেল সপ্তাহে রোববার রাত ও সোমবার সারাদিন প্রায় দেশব্যাপী প্রবল বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনায় প্রাণ গেছে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের। আগেও পাহাড়ধসে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা আমাদের দেখতে হয়েছে। প্রায় প্রতিবছরই এ ধরনের অঘটনে স্বজনহারাদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে থাকে। কিন্তু এত মানুষের মৃত্যু আগে খুব বেশি দেখতে হয়নি। উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনীর দুই কর্মকর্তা ও দুই সৈনিকের আত্মাহুতি দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যপরায়ণতার এক স্মরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এটা গভীর উদ্বেগজনক যে গত ১১ বছরে গড়ে পাহাড়ধসে প্রতিবছর ৩০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। নয়নাভিরাম পার্বত্য অঞ্চল যেন এখন এক মৃত্যু উপত্যকা। ২০০৭ সাল পরবর্তী দশকে শুধু গত বছর প্রাণহানির কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিশেষজ্ঞরা অতিবৃষ্টিজনিত পাহাড়ি ঢল ছাড়াও পাহাড় কেটে অপরিকল্পিত বসতি স্থাপন এবং গাছপালা উজাড় করার কারণে পাহাড়ধসের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু এতে কোনো নতুনত্ব নেই। এসব সমস্যা চিহ্নিত এবং তার প্রতিকারে প্রশাসনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। প্রমাণ হিসেবে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
পাহাড়ে বাইরে থেকে বসবাস করতে আসা বহিরাগত সবাই পাহাড়কে দেখেছে মাটির স্তূপ হিসেবে। তাই পাহাড়ের পর পাহাড় কাটা হয়েছে। উধাও করা হয়েছে পাহাড়ের প্রাণবৈচিত্র্য, উচ্ছেদ করা হয়েছে পাহাড়ের যুগ-যুগান্তরের আদিবাসীদের। দীর্ঘদিন থেকেই পাহাড় কাটা এবং পাহাড় বাণিজ্যের বিরুদ্ধে জনদাবি উঠলেও রাষ্ট্র এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পাহাড়বান্ধব উদ্যোগ নেয়নি। দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনার পর আজ পাহাড় রক্ষায় কঠোর আইনি উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। যাতে দেশের এক টুকরো পাহাড়ও কোনোভাবে কোনো উন্নয়ন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কাটা না হয়। পাশাপাশি সাম্প্রতিক পাহাড়ধসে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি রাষ্ট্রের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
লেখক: সম্পাদক, ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কম
সম্পাদনা: আশিক রহমান