নাজাতের শেষ দশদিন
হুমায়ুন আইয়ুব
রহমত, বরকত, নাজাত। এ মাসের প্রতিটি দশকে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ উপহার রোজাদারদের জন্য রেখে দিয়েছেন। রহমত বরকত শেষ হয়ে ২১ রমজানের মধ্য দিয়ে শুরু হলো নাজাতের বিশেষ দশদিন। নাজাতের অর্থই হচ্ছে পরিত্রাণ কিংবা মুক্তি। যেহেতু সিয়াম সাধনা তথা এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে বান্দা গুনাহ থেকে মুক্তি পান, পরকালে কঠিন শাস্তি তথা দোজখ থেকে মুক্তি পেয়ে থাকেন, এজন্যই মাহে রমজানকে নাজাতের মাস বলা হয়েছে।
মাহে রমজানের যত ফজিলত রয়েছে তার শেষ কথাই হচ্ছে নাজাত। এই একমাসে ইফতার, সেহরি, সিয়াম সাধনা, নামাজ দোয়া, এবাদত বন্দেগী, দান সদকা ও ভাল কাজের সফলতাই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি তথা এই নাজাত। মাহে রমজানকে মহানবী সা. নিজেই রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি সা. বলেছেন, এটি এমন একটি মাস, যার প্রথম ভাগে আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগে গুনাহের মাগফেরাত এবং শেষ ভাগে দোজখের আগুন থেকে মুক্তিলাভ রয়েছে।’ (মিশকাত)। হজরত হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করিম সা. এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য কালেমা পড়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করেছে এবং তার শেষ নিঃশ্বাসও কালেমার উপর হবে। যে ব্যক্তি কোনোদিন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখলো তার শেষ নিঃশ্বাসও সেটার উপর হবে এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সদকা করেছে তার শেষ নিঃশ্বাসও সেটার উপর হবে এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে ইমাম আহমদ ৯ম খ-, ৯০ পৃষ্ঠা)।
মাহে রমজানের এই নাজাতের দিনগুলোতে এবাদত বন্দেগী করে, আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে নিজের মুক্তি অর্জন করতে না পারলে সে প্রকৃত অর্থেই সবচেয়ে বড় দুর্ভাগা মুসলমান। কারণ, সে জীবনে এই মাহে রমজান আর নাও পেতে পারে, এটিই তার শেষ রমজান হতে পারে। তাই প্রত্যেক বান্দার উচিত এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগানো। এক হাদিসে রয়েছে, হজরত জিবরাইল আ. এসে নবীজী সা. কে বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি, যে রমজান মাস পাওয়ার পরও নিজের গুনাহ মাফ করে নিতে পারল না। তখন নবীজী সা. বললেন, আমিন। (মুসতাদরাকে হাকেম)
তাই বান্দার উচিত পবিত্র রমজানের শেষ দশদিনে আগের যত গাফিলতি, ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে তা দূর করে একাগ্রচিত্তে সিয়াম সাধনা করে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করার মধ্য দিয়ে নাজাত প্রাপ্ত হওয়া। কোনোভাবেই যেন আমরা মাহে রমজানের মতো আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামতকে হেলায় শেষ করে না দিই। উম্মুল মুমেনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রমজানের শেষ দশক আসত তখন নবী করীম সা. তার লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি এবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাতে জেগে থাকতেন ও পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ বুখারী) আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাত্রে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন। সুতরাং আমাদের কর্তব্য, বেশি বেশি নেক আমল এবং তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিজেদের এই শাহি ফরমানের অন্তর্ভুক্ত করা। এ প্রসঙ্গে অন্য হাদিসে হজরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমযান মাসে প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রতি রাতেই তা হয়ে থাকে। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস-১৬৪৩, মুসনাদে আহমদ, হাদিস-২২২০২, তবারানি হাদিস-৮০৮৮. বায়হাকি ৩৬০৫ হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রমযান মাস লাভকারী ব্যক্তি যে উত্তমরূপে সিয়াম ও কিয়াম (রোযা, তারাবি ও অন্যান্য আমল) পালন করে- তার প্রথম পুরস্কার এই যে, সে রমযান শেষে গুনাহ থেকে ওই দিনের মতো পবিত্র হয় যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস-৮৯৬৬
যড়সধঁহধুঁন@ুধযড়ড়.পড়স