জাকাত দেওয়ার উদ্দেশ্য এবং নীতি-নৈতিকতা
ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন
ইসলামের বুনিয়াদ যে পঞ্চস্তরের উপর প্রতিষ্ঠিত, তন্মধ্যে নামাজের পর সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে জাকাত। পবিত্র কুরআন মাজিদে যেখানে নামাজের কথা বলা হয়েছে সেখানেই জাকাতের কথা বলা হয়েছে। বারবার এ নির্দেশ দেওয়ার কারণ হলো নামাজ দ¦ারা ব্যক্তি ও পরিবার সংশোধন হয়। আন্যদিকে জাকাত দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্র সংশোধিত হয়। আর্থসামাজিক উন্নয়নে মুসলিম রাষ্ট্রের অর্থের বড় একটা যোগানের ভিত হচ্ছে জাকাত ব্যবস্থাপনা। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর আমল থেকে যখন জাকাতের বিধান শুরু হয় তখন কয়েক বছর পর থেকে দেখা গেল জাকাত নেওয়ার মতো লোক খুঁজে পাওয়া যেত না। এটা সম্ভব হয়েছে সুষ্ঠুভাবে জাকাত বণ্টন ও অর্থনৈতিক ভিত্তি অনেক মজবুত হওয়ার কারণেই। কিন্তু আমাদের দেশে জাকাত যথাযথভাবে দেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে যারা জাকাত দিচ্ছে তারা কোনো সামষ্টিকভাবে বা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে জাকাত না দেওয়ার কারণে দরিদ্র মানুষ গরিবই থেকে যাচ্ছে।
সাময়িক কিছুদিন হয়তো ভালো থাকে, তারপর দরিদ্ররা আবারও পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। এজন্য আমাদের জাকাত ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করা দরকার। অন্যদিকে জাকাত দেওয়ার ফলে ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দূর হয়। আমাদের সমাজে যারা ধনী আছেন, যারা জাকাত দেওয়ার মতো সামর্থ্য রাখেন তাদের অধিকাংশই নাম মাত্রই জাকাত দেন বা শরিয়তের বিধান মতে আসলেই জাকাত দিচ্ছেন না বিধায় এই বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। আমাদের ধনীরা আসলে জানেনই না কোথায় জাকাতের অর্থ ব্যয় করতে হবে। জাকাতদাতাদের বোঝানোর জন্য সঠিক পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। ধনীরাও চান দারিদ্র্যবিমোচন হোক। তাদেরকে একত্রিত করে কোথাও বসে জাকাতের গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝানো। দেশে যারা ওলামায়ে কেরাম আছেন, যাদেরকে মানুষ বিশ্বাস করে তারা যদি সঠিকভাবে এই উদ্যোগ নেন তাহলে সফল হওয়া যাবে। অর্থাৎ সামাজের উন্নয়নের জন্য তাদেরকে একত্রিত করে যারা ধর্মীয় লিডার আছেন তারা একটা রোডম্যাপ তৈরি করেন তাহলে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমে আসবে। ধনীদের কাছে এই ম্যাসেজটা দিলে বিষয়টি তাদেরও বোধগম্য হবে।
কোনো ধনী লোক যদি চান একজন মানুষকে জাকাতের সব অর্থ দিয়ে তাকে স্বাবলম্বী করবেন সেটাও করা যায়। যেমন কাউকে একটা রিকশা বা একটা সেলাই মেশিন কিনে দিলে সেই লোক যদি স্বাবলম্বী হয়ে পরবর্তীতে তিনিও জাকাত দিতে পারবেন। জাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুল (স.) সাহাবায়ে কেরামদেরকে জাকাত, ছদকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং উৎসাহ প্রদান করেছেন। জাকাতদাতার জন্য দোয়া ও প্রশংসা করেছেন।
পরিচিতি: সহকারী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, ঢাবি
মতামত গ্রহণ: ফাতেমা-তুজ-জোহরা
সম্পাদনা: আশিক রহমান