গাড়িবহরে হামলা করল কারা? নিরুত্তর লাখ টাকার প্রশ্ন
অজয় দাশগুপ্ত
চট্টগ্রাম শহরের অদূরে বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুলের গাড়ি বহরে হামলা হয়েছে। পাহাড়ে ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল। সেখানকার মানুষদের যাদের মরার কথা তারা মরে বেঁচেছে। যাদের আহত বা খারাপ দশা তারা যুঝছে/লড়ছে মরণের সঙ্গে। চারদিন পর জনমতের ভয়ে বা নিজেদের তাগিদে যে কারণেই হোক মাঠে না থাকা বিএনপির মহাসচিব ফখরুল সাহেব চট্টগ্রাম বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীরা সেখানে যাবার পথে হামলার শিকার হলেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই দায় পড়বে সরকারি দলের ওপর। তারা যে করেনি সেটাও বা বলি কি করে? তাদের ভেতর ঘাপটি মারা অতিউৎসাহী তাদের ভেতর ঢুকে পড়া বিএনপি-জামায়াতের অনুচরেরা একাজ করতেই পারে। এমনও বিচিত্র নয় দাপটের সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের কেউ কেউ এই সুযোগে বিপ্লবী বনে যাবার চেষ্টা করে হিরোর খাতায় নাম লেখাতে চেয়েছে। যেটাই হোক দায় সরকারকে নিতেই হবে।
ঘটনা ঘটার পর বিলম্ব না করেই এ বিষয়ে কাউকে ছাড় না দেওয়ার কথা বলে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জনাব কাদের দলের সাধারণ সম্পাদক পদটিকে সর্বরোগের মহাষৌধ মনে করেন। এবং সব বিষয়েই তার মতামত রাখেন। সরকারি দলের সেক্রেটারি জেনারেল বলতেই পারেন। তবে আমরা খুশি হতাম যদি বিচারমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিছু বলতেন। বিষয়টা একটু পরিষ্কার করা যাক। মীর্জা ফখরুল বা বিএনপি নেতারা সেখানে গেলে কি হতো? তারা কি সেখান থেকেই সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করতেন? না সেখানেই মানুষ আওয়ামী লীগের শাসন অবসানে জেহাদ ঘোষণা করত? কিছুই হতো না। যেসব গৎবাঁধা কথা বলেন সেগুলো বলে কিছু দান-খয়রাত বিতরণ করে তারা ফিরে আসতেন। ফলে কারা কি কারণে এই ঘটনা ঘটালো সেটা জানা জরুরি। তবে এটা নিশ্চিত সে সত্য কোনোদিনও আলোর মুখ দেখবে না।
মীর্জা ফখরুল ও বিএনপি কিন্তু এই ঘটনায় আরও একধাপ এগিয়ে রইল। তারা প্রমাণ করতে পারল দেশে আর যাই থাক নিরাপত্তা নেই। আইনের শাসন বলে আসলে কিছু আছে কি নাই সেটা বিতর্কিত বিষয়। সঙ্গে এটাও বলি মীর্জা সাহেবরা আরও আগেই সে এলাকায় যেতে পারতেন। গেলে প্রমাণ হতো বিষয়টা যতটা রাজনৈতিক তার চেয়ে বেশি মানবিক। এই মানবিকতার প্রশ্নে সরকারি দলও ছাড় পাবে না। তাদের যে নেতার এলাকা সেই হাছান মাহমুদকে এখনো সেখানে যেতে দেখিনি। ইনি আর ইনু সাহেব পালা করে খালেদা জিয়াকে গালাগাল করা ছাড়া আর কি কাজে আসেন জানি না। নির্বাচন বলে যে একটা ব্যাপার আছে তাতে যে মানুষের ভোট দরকার হয় এই সত্য মানলে এদের কপালে দুর্ভোগ আছে। আর যদি সবাই মনে করে ভয় দেখিয়ে গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে দূরে রেখে দেশ শাসন করা যায় এবং তা অনন্তকাল তবে সময়ই হবে এর সেরা উত্তরদাতা।
মীর্জা ফখরুলের ইমেজ তার দলের অন্য নেতাদের চাইতে বেটার। তিনি ভদ্র ভাষায় সুন্দর করে কথা বলেন। আগুন দিয়ে যান পোড়ানো, মানুষ মারা, জ্বালাও পোড়াওকেও তিনি বাচনভঙ্গীতে মনোরম করে তুলে ধরেন। এমন মানুষের গায়ে বা গাড়িতে হাত পড়লে ভোটারদের সংবেদনশীল মনে চোট লাগে বৈকি। মুশকিল হচ্ছে এই চোট লাগানোটা ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বিএনপি উভয়ের জন্য জরুরি। তাই আমাদের জানা প্রয়োজন এই গাড়িবহরে হামলার পেছনে আসলে কারা? জানি এই জীবনে তার উত্তর মিলবে না।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান