প্রস্তাবিত বাজেটকে নির্বাচনমুখী হয়নি বলে অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকার দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের ক্ষোভ
* আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি
* কম কথা বলার পরামর্শ
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : প্রস্তাবিত বাজেটকে নির্বাচন বিরোধী এবং অর্থমন্ত্রীর একগুঁয়েমির ফসল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করা অব্যাহত রাখলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা। বাজেট নিয়ে জনগণের মধ্যে সৃষ্ট অসন্তোষকে গুরুত্ব না দিয়ে অর্থমন্ত্রীর গত কয়েকদিনর বক্তব্য নিয়েও গতকাল সংসদে তোপের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তারা অর্থমন্ত্রীকে বাজেট নিয়ে বেশি কথা না বলার পরামর্শ দিলেন। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক আমানতের উপর আবগারি শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাব, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ঘোষণা এবং বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বিতর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীর সামনেই। সমালোচনার একপর্যায়ে অর্থমন্ত্রী অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
এছাড়া গতকাল জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকেও অনির্ধারিত আলোচনায় আবগারি শুল্কসহ বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মন্ত্রিরা অভিযোগ করেন। তারা প্রস্তাবিত বাজেটকে নির্বাচনমুখী নয় বলে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীও বাজেটের অসঙ্গতিগুলো নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে বেশি কথা না বলার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বাজেটের অসঙ্গতি কি আছে তা আমরা অবশ্যই খুঁজে বের করবো এবং এর সমাধান করবো।
গতকাল সোমবার বাজেট আলোচনায় আওয়ামী লীগের একাধিক সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট দিয়েছেন ভালো কথা। কিন্তু জনগণের কষ্ট আওয়ামী লীগ মেনে নিতে পারে না। আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার করুন। আপনার কিছু কথাবার্তা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। আপনি কম কথা বলেন। বয়স হয়ে গেছে কখন কি বলতে কি বলে ফেলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাজেটে সমস্যা থাকলে দেখা হবে। আপনি বললেন, ১ লাখ টাকা যার আছে সে সম্পদশালী। ৪ হাজার কোটি টাকা কোনো টাকা না হলে ১ লাখ টাকা টাকা হয়ে গেল? সাধারণ মানুষের আমানতের উপর কেন এই শুল্ক বসালেন। এর জন্য আমাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
শেখ সেলিম বলেন, আপনি অর্থমন্ত্রী, আপনার কাজ বাজেট পেশ করা। এই সংসদের ৩৫০ জন জনগণের প্রতিনিধি ঠিক করবেন জনগণের কল্যাণে কোনটা থাকবে, আর কোনটা থাকবে না। একগুঁয়েমি সিস্টেম বন্ধ করেন। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর টাকা নিয়ে গেল। প্রয়োজনে ভ্যাটের আওতা বাড়ান। সব প্রতিষ্ঠানকে ইসিআর মেশিন দেন। যাতে ভ্যাট দিতে বাধ্য থাকেন। ঢালাওভাবে ভ্যাট বিশ্বে কোথাও নেই।
এদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বাজেট নিয়ে সারাদেশে আলোচনার ঝড় চলছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন এটা নির্বাচনি বাজেট নয়। তাহলে অর্থমন্ত্রী কবে নির্বাচনি বাজেট দেবেন? আগামী বাজেট কার্যকর হবে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। তখন বর্ষা শুরু হবে। সেপ্টেম্বরে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় গেলে অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল। এবারই নির্বাচনমুখী বাজেট করা উচিত ছিল। বলা যায় অর্থমন্ত্রী এবার নির্বাচন বিরোধী বাজেট করেছেন। অর্থমন্ত্রী কী কারণে কার স্বার্থে ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক করেছেন জানা নেই। হলমার্কের ৪ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির পর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন এ টাকা কিছু নয়। তাহলে কেন সামান্য টাকার জন্য সারাদেশে মানুষের মধ্যে আক্ষেপ তৈরি করলেন।
হানিফ ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এক বছরে ৩০ শতাংশ বাড়তি ভ্যাট নেওয়ার নজির নেই। এটা যৌক্তিক নয়। ব্যাংক খাতে লুটপাটে কিছুই করতে পারছেন না এই অর্থমন্ত্রী। অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংককে এক হাজার কোটি টাকা মূলধন দেওয়া হচ্ছে। কার টাকা, কেন দিচ্ছেন? তারা দুর্নীতির জন্য লুটপাট করবে আর মূলধন দিতে হবে জনগণের? সরকারি টাকা এভাবে লুটপাট করতে দেওয়া যাবে না।
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, সামনে নির্বাচন আসছে। অর্থমন্ত্রী তার আগে জনগণকে বিভ্রান্ত করে দিলেন। আগামী নির্বাচনে আল্লাহ তাকে (অর্থমন্ত্রী) সুযোগ দেবে কিনা জানি না। এটা মরার ওপর খাড়ার ঘা। সুদ এমনিতেই কম। সঞ্চয়পত্রে সুদের হার যাতে না কমানো হয়। এটা কমালে ঠিক হবে না। ১০ শতাংশ বাড়ালে খরচ হবে এক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু উপকার পাবে লাখ লাখ মানুষ। ব্যাংকের টাকা পাচার বন্ধ করতে পারছেন না।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য আবুল কালাম অর্থমন্ত্রী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেন। এছাড়া গত ১ জুন বাজেট উত্থাপনের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ সরকারের ৬ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর ঘোষণা, ব্যাংক আমনাতে বাড়তি আবগারি শুল্ক, ভ্যাট নিয়ে তারা অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। এছাড়া প্রতিদিন ক্ষমতাসীন জোটের অন্য শরিকরা এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপিরা কঠোর সমালোচনা করে এটি প্রত্যাহারের দাবি জানান। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ