ধানের দেশে ভাতের উৎকণ্ঠা এবং রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির ‘আক্রমণের দুঃস্বপ্ন’!
মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে
ভাবা যায়, দেশে এখন মোটা চালের কেজি ৬০ টাকা! প্রশ্ন উঠতে পারে, রমজানের শুরু থেকে হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধির এই পরিস্থিতিটা কী খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে ছিল না? মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টরা তা ব্যবসায়ীদের কারসাজি বললেও এ বছর চালের মজুদ ৭ বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে, এমনকী গত বছরের তুলনায় প্রায় চারগুণ কম; অর্থাৎ বর্তমান মজুদ ১ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। ফলে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত চাল আমদানি করে হলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে মন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতিটা হচ্ছে, আমদানি শুল্ক না কমালে দাম কমবে না। এতে সরকার অবশ্য তা ২৫ শতাংশ কমানোর চিন্তা-ভাবনা করছে। প্রত্যাশা থাকবে, তাতে চালের দাম দ্রুতই ৪০ বা ৪৫ টাকায় নেমে আসবে এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে শোভা বর্ধিত ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ সেøাগানটি ধানের দেশে সাধারণের ভাতের উৎকণ্ঠাকে দূর করবে। কারণ, ২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী ক্ষরায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও সাধারণ কৃষক ও মধ্যবিত্তকে আমদানি করা খাদ্যের ধকল পোহাতে হয়েছে নিদারুণভাবে।
অন্যদিকে পাহাড় ধসে দুস্থদের সাহায্য করতে গিয়ে রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যরা যেভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন, তা পুরোপুরি সহিষ্ণু রাজনীতির পরিপন্থী ও উদ্বেগজনক ঘটনা। কারণ, যেখানে পাহাড় ধসে প্রায় পৌনে ২০০ লোকের প্রাণহানির সংবাদ পশ্চিমা গণমাধ্যম এমনকী কানাডায় প্রচারিত হয়েছে, সেখানে বিরোধী দলের মানবিক তৎপরতা প্রতিরোধ বা আক্রমণ যে কোনো বিবেকসম্পন্ন হৃদয়কেই নাড়া দিতে বাধ্য। এক্ষেত্রে ‘ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও সহায়-সম্পদের মায়ায় মানুষ পাহাড় থেকে নেমে আসেনি বলে প্রাণহানি ঘটেছে’ কিংবা ‘বিএনপির গাড়িবহর রুট পরিবর্তন করায় তাদের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হয়নি’ এ জাতীয় বক্তব্যগুলো কতটুকু বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক, তা বলার অবকাশ রাখে না। তবে ‘আক্রমণের ঘটনা দুঃস্বপ্নের মতো’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা তার সজ্জনসুলভ অভিব্যক্তিত্বেরই বহিঃপ্রকাশ। কেননা, অন্যের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার ক্ষমতা, যা ইংরেজিতে ‘এমপেথি’ বলে গণ্য, তা বরাবরই সংযোগ ত্বরান্নয়নে দিগন্ত প্রসারী, হৃদয়জয়ী ও অমোঘ ক্ষমতাধর। তাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিবর্তে পারস্পরিক ‘এমপেথী’ তাড়িত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘হামলা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়, খতিয়ে দেখা হচ্ছে’। আমরা তার বক্তব্য নয়, বরং ফলাফলের অপেক্ষায় থাকলাম!
ই-মেইল: নঁশযধৎর.ঃড়ৎড়হঃড়@মসধরষ.পড়স