কত যে বৈচিত্র্যে ভরা বঙ্গভূমি!
স্বকৃত নোমান
মাছ ধরা যাদের পেশা তাদেরকে জেলে, মালো, জাইল্যা, নিকারি ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে। এতদিন তাই জেনেছি, বইপুস্তকেও তাই পড়েছি। এবার শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে গিয়ে জানলাম ওই অঞ্চলে দুটো সম্প্রদায়Ñ বাঙাল ও মাইমাল। হাল বেয়ে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন তারা বাঙাল এবং মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন তারা মাইমাল। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, মাইমালরা নিজেদের মাইমাল হিসেবে মানতে নারাজ। হাইল হাওরের তীরে কথা হয় মাইমাল সম্প্রদায়ের এক তরুণের সঙ্গে। সে জানাল, কোনো বাঙাল যদি তাদেরকে মাইমাল বলে আগে তার লাশ ফেলে দেওয়া হবে, বিচার-আচার কোর্ট-কাচারি পরে। খেদের সঙ্গে সে বলল, ‘বাঙালরা আমাদেরকে মাইমাল বলবে কেন?’ আমি বললাম, ‘তুমিও তো বাঙালিদের বাঙাল বললে।’ তখন সে চুপ মেরে গেল।
ফেনীর সীমান্তবর্তী অঞ্চলে একটি সম্প্রদায় রয়েছে, যাদেরকে বলা হয় ‘হাঁডু’। এক কালে তারা জমিদার-জোতদারদের লাঠিয়ালের কাজ করত। মারামারিই ছিল তাদের একমাত্র পেশা। ‘হাঁডু’ এখন গালি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাঁডুদেরকে হাঁডু বললে তারা মাইন্ড করে।
কত যে বৈচিত্র্যে ভরা বঙ্গভূমি! সারাদেশে পেশাভিত্তিক এ রকম বিস্তর সম্প্রদায় রয়েছে। বাঙালির এইসব গৌণ সম্প্রদায়গুলো নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বাঙালির সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণা জরুরি।
লেখক: কথাসাহিত্যিক/সম্পাদনা: আশিক রহমান