লন্ডনে ভ্যান হামলাকারী বিকারগ্রস্ত-মদ্যপায়ী
রাশিদ রিয়াজ : ৪ সন্তানের জনক ৪৭ বছর বয়সী ড্যারেন ওসবর্ন ঠান্ডা মাথায় মুসলমানদের হত্যার কথা বলতেন, হুমকি দিতেন। ফিন্সবারি পার্ক এলাকায় মসজিদ থেকে আগত মুসল্লিদের ওপর হামলার একদিন আগে কার্ডিফের একটি পাবে ড্যারেন মদ্যপ অবস্থায় এ ধরনের হামলার প্রতিজ্ঞা করে হৈ চৈ করে বলেও ওই পাবের আরো পানীয় রসিকরা জানিয়েছেন। শনিবার ড্যারেন নিখোঁজ হন, তারপর সাদা ভ্যানটি ভাড়া করে এ হামলা ঘটান। তবে ব্রিটিশ মিডিয়া ডেইলি মেইল তাকে মানসিক অসুস্থ বলে অভিহিত করছে। সিঙ্গাপুরে জন্মগ্রহণ করেন ড্যারেন। ব্রিটেনের সমারসেট এলাকার ওয়েসটন-সুপার-মেয়ার এলাকায় বেড়ে ওঠেন। সর্বশেষ কার্ডিফে বাস করতেন তিনি। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছে পুলিশ।
ফিন্সবারি পার্ক এলাকার মসজিদ থেকে রাতে তারাবির নামাজ পড়ে আসা মুসল্লিদের ওপর ভ্যান হামলা করার পরও ড্যারেন চিৎকার করে বলেন, আমি সব মুসলিমকে হত্যা করব। আমি তা করছি। হাসিমুখে তিনি আশেপাশের ভীতসন্ত্রস্ত্র মুসল্লিদের তিনি ইশারায় চুম্বন এঁকে তা বাতাসে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। ক্ষিপ্ত মানুষ তার এই হামলার জন্যে তাকে পুলিশে সোপর্দ করার জন্যে আটক করে। এসময় কয়েকজন তাকে জিজ্ঞেস করে কেন তুমি মুসলিমদের মারতে চাও? ড্যারেন তখন চিৎকার করে বলতে থাকে, ফা মুসলিম, লিভ মি এ্যালোন। মসজিদটির ইমাম তাকে নিজ দায়িত্বে হেফাজতে রাখার পর পুলিশের হাতে তুলে দেন।
ঝগড়াটে ও ক্ষ্যাপাটে স্বভাবের কারণে ৬ মাস আগেই স্ত্রীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়। আকণ্ঠ মদে ডুবে থাকতেন ড্যারেন। পাবে মদ্যপ অবস্থায় প্রায়ই মুসলমানদের প্রতি খিস্তিখেউড় করতেন। অভিশাপ দিতেন। ভ্যান হামলার একদিন আগেও মুসলমানদের হুমকি দিয়ে কোনো ক্ষতি করার দৃঢ় অভিপ্রায় ঘোষণা করেছিলেন।
ড্যারেন ওসবর্ন সম্পর্কে আগেভাগে কোনো তথ্য জানা ছিল না ব্রিটিশ পুলিশ কিংবা গোয়েন্দা সংস্থা এমআই ফাইভের। সাউথ ওয়েলস থেকে ৮০ পাউন্ড দিয়ে ভ্যানটি ভাড়া করেছিলেন। অসুস্থ ব্যক্তিদের সেবা করত এমন একটি মুসলিম গ্রুপের লোকজনকে ড্যারেন প্রায়ই তিরস্কার করতেন। মুসল্লিদের ওপর ভ্যান চালিয়ে দেওয়ার পরও ড্যারেন চিৎকার করে সব মুসলিমদের হত্যার হুঙ্কার দিচ্ছিলেন এবং এসময় মুসল্লিরা তাকে সংযত রাখার চেষ্টা করে। ড্যারেনের মা ক্রিস্টিন ওসবর্ন এ হামলার নিন্দা জানিয়ে এ ঘটনাকে একটি ‘অত্যাচার’ হিসেব মন্তব্য করেন ও তার বোন নিকোলা বলেন তার ভাই সন্ত্রাসী নয় তবে এ ঘটনার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
হলিবিশ ইন পেন্টউইন নামের যে পাবে মদ খেতে যেতেন ড্যারেন সেখানকার একজন বলেছেন, হামলার আগের রাতেও ড্যারেন যথেষ্ট মদ গিলেছেন। আকণ্ঠ মদে চুর হয়েছিলেন। মুসলমানদের অভিশাপ দিচ্ছিলেন। কিছু একটা বিহিত করতে চাচ্ছিলেন। আরো একটি পাবে যেতেন ডারেন। সেখানকার একজন বলছেন, ড্যারেন খুব উচ্চস্বরে কথা বলতেন, মারমুখী স্বভাব ও আগ্রাসী ধরনের ব্যক্তি ছিলেন। তার সঙ্গে কারো বনিবনা না হলে তিনি তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন। পেশায় ড্যারেন একজন বেকার মেকানিক। সাউথ ওয়েলসের কার্ডিফে তার বাসার পেছনে বাগানে প্রায়ই তিনি পার্টির আয়োজন করতেন এবং এ ধরনের আয়োজন ছিল তার পরিবার সংস্থানের একটি উপায়। এক প্রতিবেশি জানান, ড্যারেন সন্তানবৎসল ছিলেন। গত শুক্রবারেও ড্যারেন তার ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দিয়েছেন। শনিবার সকালেও এক প্রতিবেশির ঘরে ড্যান পানির ট্যাপ মেরামত করে দেন। এর একঘন্টা পর ড্যারেন ভ্যান ভাড়া করতে যান।
পুলিশ এ ঘটনায় সন্দেহভাজন যে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে ড্যারেনের মা ও স্বজনরা এখনো ওয়েস্টন-সুপার-মেয়ার এলাকায় বাস করছে। মায়ের সঙ্গে ড্যারেনের এক মাস কোনো যোগাযোগ ছিল না। মা তার ছেলে ড্যারেনকে একজন জটিল মানুষ বলেও মন্তব্য করেন। ড্যারেনের মা বলেন, তার পক্ষে কোনো কথা বলব না, হ্যা সে আমার ছেলে এবং যা সে ঘটিয়েছে তা খুবই ভয়ানক, ভয়ানক এক আঘাত। ড্যারেন যা করেছে তা কোনো ব্যাংক ডাকাতির মত ঘটনা নয়। এটি নৃশংসতা। আমি এটি মেনে নিতে পারছি না। এসময়ে কোনোভাবেই বিষয়টি মেনে নেওয়ার মত নয়। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ