চাল আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ হচ্ছে বাজার স্বাভাবিক হওয়ার আশা বাণিজ্যমন্ত্রীর
হাসান আরিফ : বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, চাল বাজারের অস্থিরতায় লাগাম দিতে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া রেগুলেটরি ডিউটিও প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে চালের উপর আমদানি পর্যায়ে ১৮ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার হবে। এতে চালের বাজার দ্রুত স্বাভাবিক হবে বলে মন্ত্রীর আশা।
গতকাল সচিবালয়ে কম্পিটিশন আইন নিয়ে এক কর্মশালার শুরুতেই বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ শুল্ক কমানোর এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে আদেশ জারি হবে।
এতদিন বিদেশ থেকে চাল আমদানি করলে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি দিতে হতো। সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং রেগুলেটরি ডিউটি পুরোপুরি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এদিকে ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির ফলে সরকারের চালের মজুদও তলানীতে পৌঁছে যাওয়ায় সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় ব্যবসায়ীদের চাল আমদানিতে বিনা মার্জিনে ঋণপত্র খোলার সুযোগ দিচ্ছে সরকার। সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাল আমদানির এলসি খুলতে ব্যাংকগুলো কোনো মার্জিন ধার্য করতে পারবে না।
মন্ত্রী বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে বাজার দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ইতোমধ্যে সরকারি পর্যায়েও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করা যায় বাজার দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
মন্ত্রী বলেন, বাজারে পণ্যের মূল্য ইচ্ছাকৃত বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ব্যবসাবান্ধব সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রয়েছে। স্থায়ীভাবে পণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকার সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করে ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ, মনোপলি, জোটবদ্ধতার মাধ্যমে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রবনতা বন্ধ করতে সরকার ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন পাস করেছে। সে মোতাবেক প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করা হয়েছে। দেশে স্বাভাবিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য সরকার সবধরনের পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতা কমিশন সে লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট দেশের মানুষের প্রত্যাশা মতো সংশোধিত আকারে পাস হবে। পাসকৃত বাজেট দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং মানুষ খুশি হবেন। বাজেট পাসের পর আর কোনো আলোচনা বা সমালোচনা থাকবে না বলেও তিনি বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে অপ্রত্যাশিত প্রাণহানির ঘটনা দুঃখজনক। দুর্ঘটনার পর থেকেই সরকার উদ্ধার কাজসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুই করে যাচ্ছে। উদ্ধার কাজ করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্গত মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই করে যাচ্ছে সরকার।
প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল খান চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শুভাশীষ বসু। মূল আলোচক ছিলেন, ইষ্ট-ওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ. কে. এনামূল হক। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য এটিএম মুর্তজা রেজা চৌধুরী, মো. আবুল হোসেন মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুন্সী শফিউল হক, প্রধান আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক আফরোজা খান, জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্টার মো. মোশাররফ হোসেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্করসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।