কীভাবে নাজাত পাবেন?
রুবাইয়া জান্নাত: ইসলামের দৃষ্টিতে ১২ চান্দ্র মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস হলো রমজান। [জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশআল্লাহপাক বিভিন্নভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন যে, অন্য ১১ মাসের তুলনায় রমজান মাসের গুরুত্ব ও মহত্ব অনেক বেশি। ইবাদতের মাস এ রমজানে সব নবী-রাসুলই ইবাদতে সময় দিয়েছেন। আর শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যেভাবে রমজানকে গ্রহণ করেছেন, সৎকাজের মধ্যে অতিবাহিত করেছেন, তা আমাদের জন্যে অনুসরণীয়। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রমজান মাস এসেছে কি না তা আমরা রাসুলকে দেখে বুঝতে পারতাম। অর্থাৎ অন্য সময়ের তুলনায় এ মাসে তার ইবাদত বন্দেগী এত বেড়ে যেত যে, অন্যরা তাকে দেখে বুঝত যে, এখন রমজান চলছে।
আল্লাহর ক্ষমাশীলতা: আল্লাহ মানুষকে ভালবাসেন, ভীষণ ভালবাসেন। এ জন্যে তিনি মানুষকে বার বার ক্ষমা করে দিয়েছেন। মানুষ যাতে বার বার সঠিক পথে ফিরে আসার সুযোগ পায় সেই সুযোগ আল্লাহ পাক দিয়েছেন। নবীজী (সা.) বলেন, এক নামাজ থেকে আরেক নামাজ কাফফারা, এক জুম্মা থেকে আরেক জুম্মা একজন মানুষের জীবনের কাফফারা, এক রমজান থেকে আরেক রমজান কাফফারা। এখানে কাফফারা মানে সমান সমান করে দেয়া। অর্থাৎ ফজরের নামাজ থেকে যোহরের নামাজ পর্যন্ত একজন মানুষ যে ভুল করে, যোহরের নামাজ আদায় করার সাথে সাথে আল্লাহ সেটা মাফ করে দেন। এরকম এক জুম্মা থেকে আরেক জুম্মার ফাঁকফোকর দিয়ে যদি কোনো অপরাধ থেকে যায় আল্লাহ মাফ করে দেন। ঠিক সেরকম এক রমজান থেকে আরেক রমজান। এই একটা বছর চেষ্টা করার পরেও অজ্ঞাতে কোনো ভুলত্রুটি থেকে গেল যখনই রমজান মাসের চাঁদ উঠল আর যেই বিশ্বাসী নারী-পুরুষ এই রমজানকে স্বাগত জানালো, গ্রহণ করল এই গ্রহণ করাটাই তার জন্যে একটি বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়ার জন্যে যথেষ্ট। সুবহানাল্লাহ! তাহলে কী রকম ভালবাসা, আন্তরিকতা এবং মূল্যবোধ দিয়ে রমজানকে গ্রহণ করা উচিত এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারি। সহজ কথা হচ্ছে মানুষকে নিষ্পাপ রাখার জন্যে বা নিষ্পাপ করার জন্যে আল্লাহ যে প্রক্রিয়া দিয়েছেন এটাই নবীজী ব্যাখ্যা করেছেন। রমজান তাই নিজেকে পরিশুদ্ধ করার সুযোগ: সাধারণভাবে ধারণা হলো, রমজান একটা কষ্টকর সময়। না খেয়ে, না পান করে থাকতে হবে। আরো অনেক কিছু আছে যা করা যাবে না ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রমজান আমাদেরকে পরিশুদ্ধ করার মাস। যেমন, একটি মেশিন। নির্দিষ্ট সময় পরে এটা সার্ভিসিং করাতে হয়। নইলে মেশিন ডিস্টার্ব করতে থাকে, ঠিকমতো কাজ করানো যায় না। মানুষের জন্যে মাহে রমজানও তেমনি। প্রতি ১১ মাস পর পর এই মাসটি আসে একজন মানুষের জন্যে সুস্বাস্থ্য, প্রশান্তি, আর সাফল্যের বার্তা নিয়ে। নবীজী (সা.) বলেছেন যে এ মাসে বিশ্বাসীর রিজিক বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। আমরা অর্থকষ্টে থাকি; অভাববোধে ভুগি। এটা একজন নিঃস্ব যেমন, একজন ধনীও তেমন। যেমন, একজন কোটিপতি যখন ভাবে তার যদি দেড়কোটি টাকা থাকত! তখন সে আসলে অভাববোধে ভুগছে। এই দৈন্যদশা থেকে মুক্ত হয়ে একজন মানুষ প্রকৃত প্রাচুর্যবান হতে পারে এই রমজান মাসের সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে। লেখিকা : শিক্ষিকা
কোরআন এবং রমজান: আমরা যদি দেখি রমজান এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? কোরআন নাজিলের কারণে। পৃথিবীতে আল্লাহ যত কাজ করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং শ্রেষ্ঠতম কাজ হিসেবে তিনি মনে করেন কোরআন নাজিলকে। কোরআন নাজিল যখন সম্পন্ন হলো, তিনি ঘোষণা করলেন, আজ আমি আমার নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম। তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করলাম। অর্থাৎ গোটা মানবজাতির জন্যে কোরআনকে একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরে আল্লাহ নিজেই সন্তোষ প্রকাশ করছেন। আর এতই আনন্দিত হয়েছেন যে এই মাসটিকে ১১ মাসের তুলনায় অনেক মর্যাদাবান করেছেন! শুধু তা-ই নয়, এই মাসে একটি রাত যেটাকে আমরা কদরের রাত জানি সেই রাতটিকে হাজার মাসের দিনরাতের চাইতেও বেশি মর্যাদাবান করেছেন।
এই মাস নাজাতের মাস, সেটা আপনারা অনেকভাবেই শুনেছেন। কিন্তু কিসের নাজাত, কীভাবে নাজাত? এই নাজাতটা দুই ধরনের। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তারা যদি কবরে বন্দী অবস্থায় থাকেন, নবীজী (সা.) বলছেন যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সারাবছরই কিছু কিছু লোককে কবরের কষ্ট থেকে মুক্ত করেন, নাজাত দেন। কিন্তু রমজান মাসে তার কয়েকগুণ লোককে কবরের কষ্ট থেকে মুক্ত করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
লেখিকা : শিক্ষিকা