লাইলাতুল কদরের সন্ধানে
মাহফুজ আল মাদানী: মহিমান্বিত রাত লাইলাতুল কদরকে কখন তালাশ করব? তার জবাব রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মহান বাণীর মাধ্যমে পাওয়া যায়। ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কদরের রাত্রি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, তা প্রত্যেক রমজানেই রয়েছে’ -(আবু দাউদ)। অর্থাৎ লাইলাতুল কদর রমজান মাস ছাড়া বছরের অন্য যে কোন মাসে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। হাদীসে আরো বর্ণিত হয়েছে, ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, লাইলাতুল কদরকে তোমরা রমজানের শেষ দশকে মাসের বাকী নয় দিন থাকতে, সাত দিন থাকতে এবং পাঁচদিন থাকতে তালাশ করবে’ (বোখারী)। অন্য হাদীসে লাইলাতুল কদরকে শেষ দশকের বেজোড় রাতে তালাশের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী, ‘হজরত আবু বাকরাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা তাকে অর্থাৎ লাইলাতুল কদরকে রমজানের নয় রাত বাকী থাকতে, অথবা রমজানের সাত রাত বাকী থাকতে, অথবা পাচঁ রাত বাকী থাকতে, অথবা তিন রাত বাকী থাকতে, অথবা রমজানের শেষ রাতে (অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ শে রমজানের রাতে) তালাশ করবে’ (তিরমিজি)। আরো এক হাদীসে স্পষ্টভাবে লাইলাতুল কদরকে বেজোড় রাতে তালাশ করতে বলা হয়েছে। ‘হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করবে’ (বোখারী)।
আবার কোন কোন হাদীসে লাইলাতুল কদরকে রমজানের সাতাশ তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাবেয়ী হজরত যির ইবনে হুবাইশ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি হজরত উবাই ইবনে কা’ব (রা.) কে জিজ্ঞেস করলাম। আমি বললাম, আপনার ভাই ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, যে সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করবে সে কদরের রাত পাবে। উবাই ইবনে কা’ব (রা.) বলেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন। তিনি এর দ্বারা ইচ্ছা করেছেন যে, লোক যেন তার উপরে নির্ভর করে না থাকে। অবশ্যই তিনি জেনেছেন যে, তা রমজান মাসে এবং তা রমজানের শেষ দশকে আর তা সাতাশতম রাতে। অতঃপর তিনি ইনশাআল্লাহ না বলে দৃঢ়ভাবে শপথ করে বললেন যে, নিশ্চয়ই তা রমজানের সাতাশ তারিখে। তখন আমি বললাম, হে আবু মুনযির! আপনি কিসের ভিত্তিতে এ কথা বলেন? তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের যে চিহ্ণ বা নিদর্শন বলে দিয়েছেন তার ভিত্তিতে। ঐ দিন (রাতের পর প্রভাতে) সূর্যোদয় হবে, তবে তার কিরণ থাকবে না’ -(মুসলীম)।
প্রশ্ন আসতে পারে, যদি লাইলাতুল ক্বদরকে পাওয়া যায় তাহলে আমরা ঐ রাতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় কি বলব? তার উত্তর হাদীস শরীফে সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। ‘হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি বলে দিন যদি আমি জানতে পারি যে, লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে, তাতে আমি কি বলব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে, (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউয়ুন, তুহিব্বুল ‘আফওয়া, ফা’ফু ‘আন্নী) হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাস। অতএব আমাকে ক্ষমা কর’ (আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি)। মহান আল্লাহ যেন আমাদের মহিমান্বিত ঐ রাতের ইবাদত বন্দেগী করার পরিপূর্ণ সুযোগ প্রদান করেন।