রোজা পরবর্তী তিন করণীয়
দিদার উল আলম: ইসলাম ধর্মের ইবাদতগুলো শুধুমাত্র অনুষ্ঠান সর্বস্ব নয়। ইবাদত পালনের পাশাপাশি ইবাদতের মধ্যকার অন্তরনিহিত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তদানুযায়ী জীবন যাপনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে ইবাদত পালনের স্বার্থকতা, আর জীবন যাপনে সচেষ্ট না হলে তা মেকি হতে বাধ্য। রোজার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার (সুরা বাকারা : ১৮৩ আয়াত)।
রোজাদারের জন্য রোজা পরবর্তী কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হচ্ছে, ১. কোরআন মাজিদের সাথে সম্পর্ক : রোজাদার দিনভর রোজা রাখার পরও রাতে নামাজে ১/২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোরআন শুনতে বা এক/দেড় পারা কোরআন শুনতে ক্লান্তিবোধ করে না। এতে রয়েছে রোজাদারের জন্য কোরআন বিষয়ক এক বাস্তব প্রশিক্ষণ। এ প্রশিক্ষণের দাবী হচ্ছে রোজাদারের জীবন কোরআন কেন্দ্রিক হওয়া। আফসোসের বিষয় রোজা রেখে রীতিমত ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহ-মন নিয়ে কোরআন শুনতে অভ্যস্ত হওয়ার পরও পরবর্তীতে পাঁচ/দশ মিনিট সময় ব্যয় করে প্রতিদিন পাঁচ/দশটি আয়াত আমরা ক’জনেই বা পড়ি? আর এমন হতভাগ্য ঈমানদারের ও রোজাদারের সংখ্যা কি কম যারা মুসলমান হওয়ার পরও কোরআন পড়তেই পারেন না, একসময় কোরআন শিখলেও পরবর্তীতে ব্যস্ততা জনিত না পড়ার কারণে পড়া ভুলে গেছেন অথবা আগের মত আর সহীহ শুদ্ধ হয়না? অথচ নামাজ রোজার ন্যায় কোরআন পড়া, কোরআন তেলাওয়াত করাও কিন্তু আল্লাহর আদেশ। সুরা আন কাবুতের ৪৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, নাযিলকৃত কোরআন পড় এবং নামাজ কায়েম কর। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত আর মর্যাদার অধিকারী হলেও কোরআন না শিখলে, কোরআনের জ্ঞান না থাকলে (হাদীসেরও) ইসলাম ধর্মে তার স্থান হচ্ছে মূর্খ আর নিরক্ষরের তালিকায়। আল্লাহ বলেন, তাদের মধ্যে এমন কিছু নিরক্ষর-মূর্খ লোক আছে, যারা মিথ্যা আকাঙ্খা ছাড়া কিতাবের (কোরআনের) কিছুই জানে না, তারা শুধু অমূলক ধারনাই পোষণ করে (সুরা বাকারা ৭৮ আয়াত)। রোজাদারকে নতুন করে ভাবতে হবে, কোরআন কে বাদ দিয়ে শুধু রোজা রেখে কি মোত্তাকি হওয়া যাবে?
২. হালাল উপার্জন: এক দু’দিন নয়, মাস ব্যাপী সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজাদারকে পানাহারসহ কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হয় আল্লাহর হুকুম পালনার্থে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে করণীয় এবং জীবন জীবিকার আর রুটি-রুজির নির্দেশনা, শিক্ষা। রোজা রাখার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে রোজার শিক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে। অবৈধ, হারাম ও অনৈতিক উপার্জন থেকে রোজাদার বিরত থাকতে হবে। কারণ নামাজ, রোজা যেমন ফরজ, হালাল পন্থায় উপার্জন করা এবং হালাল খাওয়া ও ফরজ। সুরা বাকারার ১৬৮ আয়াতে এ ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র বস্তু আছে, তা থেকে তোমরা আহার কর আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সেতো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। হালাল না খেলে ইবাদত কবুল হবে না, এ তো ইসলাম ধর্মের স্বীকৃত কথা। কুট-কৌশলের আশ্রয় নিয়ে উপার্জিত অর্থ দ্বারা লালিত- পালিত শরীরের কোন ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না আর হারাম রুজি দ্বারা গঠিত শরীর জাহান্নামেরই উপযুক্ত (বোখারী)। পানাহার থেকে বিরত থাকার শিক্ষা হচ্ছে বৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থেই সংসার চালাতে হবে, জীবন-যাপন করতে হবে। সংসার চালানোর জন্য উপার্জিত অর্থ যথেষ্ট না হলে প্রয়োজনে তিন বেলার স্থলে দুই বেলা খেতে হবে, ভরা পেটের স্থলে আধাপেট খেতে হবে, দামী কাপড়ের পরিবর্তে মোটা কাপড় পরতে হবে।
৩.পরিশ্রম: রোজার মাসে আল্লাহ রোজাদারদের পরিশ্রমের-কঠোর পরিশ্রমের বাস্তব প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। সারাদিন রোজা রাখার পর ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে গা এলিয়ে দিতে মন চাইলেও রোজাদার তা না করে এশার নামাজের পর আরো বিশ রাকাত নামাজ আদায় করে। অতিরিক্ত বিশ রাকাত তারাবীর নামাজ আদায়ের মাধ্যমে পরিশ্রমের এ অভ্যস্ততা রোজাদারকে সৎ ভাবে, হালাল উপায়ে জীবন যাপনের জন্য, আরও উপার্জনের জন্য, বৈধ উপায়ে আরো উপার্জনের জন্য, ধর্মের পথে সময় ব্যয় করার জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে শেখায়। লেখক : শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট