ঈদ মোবারক
মাহফুয আহমদ: আমাদের কোনো কোনো বন্ধু জিজ্ঞেস করেন যে, ঈদের দিন “ঈদ মোবারক” বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করার বিধান কী? আদৌ এর কোনো প্রমাণ আছে কি নাই? ইত্যাকার কিছু প্রশ্ন ঈদ আসলেই আমাদের অনেক বন্ধু জিজ্ঞাসু হয়ে যোগাযোগ করেন।
সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায়, এ বিষয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে স্পষ্ট কোনো আমল বর্ণিত নয়। অবশ্য এ সম্বন্ধে সাহাবায়ে কেরামের আলম কী ছিল, তা বিবৃত হয়েছে। ঈদের দিন তাঁরা পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। এতে তাঁরা কোন বাক্য ব্যবহার করতেন? এর উত্তর শুনুন জুবাইর ইবনে নুফাইর থেকে। তিনি বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিগণ ঈদের দিন একে অপরের সাথে দেখা হলে পরস্পরে বলতেন, তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম। অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন। হাফিয ইবনে হাজার রাহ. বলেন, বর্ণনাটির সনদ হাসান। (ফাতহুল বারি, ২/৪৪৬)
ইবনুত তুরকুমানি হানাফি (রাহ.) বলেন, এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদিস আছে; যা বায়হাকি উল্লেখ করেন নি। সেটি হলো মুহাম্মাদ ইবনু জিয়াদের বর্ণনা। তিনি বলেন, আমি আবু উমামা বাহিলি এবং আরো কয়েকজন সাহাবির সঙ্গে ছিলাম। তাঁরা যখন ঈদগাহ থেকে ফিরতেন তখন একে অপরকে বলতেন, তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম। আহমাদ ইবনে হাম্বল (রাহ.) বলেন, বর্ণনাটির সনদ জায়্যিদ। (আল জাওহারুন নাকি, ৩/৩২০-৩২১) ইবনে কুদামা রাহ.ও ইমাম আহমাদের এমন মন্তব্য উল্লেখ করেছেন। (আল মুগনি,২/২৫৯) আলি ইবনে সাবিত থেকে বর্ণিত, আমি ইমাম মালিক (রাহ.) কে ঈদের সময় ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ বলে লোকদের শুভেচ্ছা বিনিময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমাদের এখানে তো বিষয়টি এমনই চলে আসছে। (আল মুগনি; ইবনে কুদামা, ২/৫৯, আল হাওয়ি; সুয়ুতি,১/৮২) শায়খুল ইসলাম হাফিয ইবনে তাইমিয়া (রাহ.) কে জিজ্ঞেস করা হলো, ঈদ শুভেচ্ছার ক্ষেত্রে লোকমুখে প্রসিদ্ধ “ঈদ মোবারক” বা এ জাতীয় বাক্যগুলোর শরয়ি কোনো ভিত্তি আছে না নাই? যদি থেকে থাকে তবে কী বলা উচিত? উত্তরে তিনি বললেন, ঈদ শুভেচ্ছায় একজন আরেক জনকে দেখলে সালাতুল ঈদের পরে “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম”, “আহালাহুল্লাহু আলাইক” এরকম কিছু বলা যায়। বস্তুত একদল সাহাবি এমনটা করতেন বলে বর্ণনা আছে। ফলে ইমাম আহমাদ প্রমুখ ইমামের দৃষ্টিতে এধরনের বলতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে আহমাদ বলেছেন, আমি নিজে থেকে আরম্ভ করি না, কেউ যদি বলে ফেলে তবে আমি উত্তর দিই। কেননা আগ বেড়ে এমন শুভেচ্ছা বিনিময় করা আদিষ্ট কোনো সুন্নাহ নয়। অবশ্য তা নিষিদ্ধ কোনো বিষয়ও নয়। তাই যে করবে তার দলিল রয়েছে। যে করবে না তার নিকটও দলিল রয়েছে। (আল ফাতাওয়াল কুবরা, ২/২২৮)
আল্লামা আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল তাহতাওয়ি হানাফি (রাহ.) বলেন, ঈদ শুভেচ্ছায় সিরিয়া, মিসর প্রভৃতি দেশের লোকেরা “ঈদ মোবারক আলাইক” এ জাতীয় বাক্য বলতে অভ্যস্ত। সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত বাক্যের সাথে এর মর্মগত মিল রয়েছে। ফলে সেটার মতো এটা বলাও জায়েয ও ভালোকথা- এমন মন্তব্য করার সুযোগ আছে। (হাশিয়াতুত তাহতাওয়ি আলা মারাকিল ফালাহ শারহ নুরুল ঈযাহ, পৃ. ৫৩০)
এসব উদ্ধৃতি থেকে প্রতিভাত হচ্ছে, ঈদের শুভেচ্ছায় “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম” বলাই শ্রেয়; যেহেতু সাহাবায়ে কেরাম এভাবে বলতেন। তবে ঈদ মোবারক, ঈদ সাঈদ ইত্যাদি বাক্য ব্যবহার করলেও কোনো অসুবিধে নেই। কারণ লোকেরা এটা ইবাদত হিসেবে করে না, শুভেচ্ছা ও সম্মান প্রদর্শনের একটি প্রচলিত মাধ্যম এবং অভ্যাস হিসেবেই করে। প্রসঙ্গত বলা যায়, বর্তমান বিশ্বের অনেক স্বনামধন্য ইসলামিক স্কলারকেও এমন বাক্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে আরবের বয়োবৃদ্ধ শায়খ ড. ইউসুফ আল কারযাবি হাফিযাহুল্লাহ এবং শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানি হাফিযাহুল্লাহ’র কথা তো উল্লেখ করাই যায়।