আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রনীতি ও ইসলাম
জাকারিয়া হারুন: গত বছর সৌদি আরবের একটি টিভি চ্যানেলে আলেমগণ লাইভ প্রশ্নোত্তর দিচ্ছিলেন। একটি ফোন এলো সোমালিয়া থেকে। জনৈক দর্শক জানতে চাইলেন, আমাদের এখানে খুব খাদ্যাভাব চলছে। কিছু রোজাদার এমনও আছি যারা সাহরিতে কিছু খাইনা, ইফতারেও আমাদের খাওয়ার কিছু থাকে না। কয়েকদিন পর পর আমরা মুখে দেয়ার মত কিছু পেয়ে থাকি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে সাহরি ও ইফতার ছাড়া কি আমাদের রোজা হবে? উত্তরদাতা আলেম, যিনি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মসজিদে নববীর মুফতি প্যানেলের সদস্য, এর কোন উত্তর না দিয়ে অঝোর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এমন রোজাদারও মুসলিম বিশ্বে রয়েছে, তারা কারো কাছে খাদ্য সাহায্য চাইছে না বরং এভাবে খাবার না খেয়ে রোজা হবে কিনা জানতে চাইছে। এর জবাব কী হতে পারে? তাদের রোজা তো অবশ্যই হবে। তবে এদের খোঁজ খবর না রাখায় সক্ষম ও ধনী মুসলমানদের ঈমান থাকবে কিনা বা রোজা হবে কিনা সে প্রশ্নই মুখ্য। আজকে ইরাকের মসুলে মানুষ গাছের পাতা ও বালি খেয়ে ইফতার ও সাহরি করছে। মুসলিম বিশ্বে এ অবস্থাই এখন চরম বাস্তবতা। ইনকিলাব ২০/৬/২০১৭
মুসলমানরা যখন অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করেছেন তখন ধনী আরব দেশগুলো কী পরিমাণ অর্থ মার্কিনিদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যয় করছে তা ভাবতেও অবাক লাগে! সৌদি আরব অস্ত্রচুক্তিসহ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামগ্রিক ৪০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে। ৫০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে আরব-আমেরিকান ইসলামী সম্মেলন করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ উপহারই দিয়েছেন ১ বিলিয়ন ডলারের। কোথায় ইসলামী চেতনা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, আরব ঐতিহ্য ?
অথচ মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, মুসলমানরা পরস্পরের ভাই ও বন্ধু। তারা যেন মুসলমানদেরেই বন্ধু ও অভিভাবকরূপে বেছে নেয়। আল্লাহ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে, তোমাদের উপর ইহুদী-নাসারারা কোনদিনই খুশি হবে না যতক্ষণ না তোমরা তাদের দলভুক্ত হয়ে যাও। আর বিচ্ছিন্নতাকে পরিহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহর রজ্জু ধর ঐক্যবদ্ধভাবে। এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (আল-কোরআন)। কিন্তু সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতি দেখে প্রশ্ন জাগে, তারা কাদের নীতি অনুসরণ করছেন। একসময় ব্রিটেন সা¤্রাজ্য ছিল বিশ্বজুড়ে, নিজেদের ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য তারা ‘ভাগ কর-শাসন কর’ নীতির বাস্তবায়ন করেছিল। ‘চীন-জাপান শত্রু, জার্মান -ফ্রান্স শত্রু, শিয়া-সুন্নী শত্রু’ এই জাতীয়তাবাদী ও সাম্প্রদায়িক যে মনোভাব মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল তা আজও বিদ্যমান। মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকালে যা সুস্পষ্ট। মুসলিমরা নিজেরাই একে অপরের সঙ্গে লড়াই করছে। নিজের ভাইদের মারার জন্য অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে। ব্রিটিশরা যে বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে গিয়েছে তা থেকে মুসলিম বিশ্ব নিজকে রক্ষা করতে পারেনি। মুসলিম উম্মাহ ‘এক প্রাণ, এক দেহ’ এই চেতনাবোধ আজ বিলুপ্ত প্রায়। ইসলামে মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বের। এ সম্পর্কের ভিত্তি ইসলামের একটি স্তম্ভের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যে কেউ তার স্বীকৃতি দেবে সেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে। ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য বজায় রাখার ব্যাপারে রাসূল সা: জোর তাগিদ দিয়েছেন। রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া, অনুগ্রহ, মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে তুমি মুমিনদের দেখবে একটি দেহের মতো। যদি দেহের কোনো একট অংশ আহত হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অংশও তা অনুভব করে’ (বুখারি ও মুসলিম)। অথচ আরব জাহান এখন নিজেদের ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখার জন্য লক্ষ লক্ষ মুসলিমের রক্তের হোলি খেলায় মত্ত সা¤্রাজ্যবাদি শক্তির পদলেহনে মত্ত। লৌকিকতা দেখানো ধর্মীয় রীতি-নীতি ইসলাম নয়। ইসলাম ভাতৃত্ব, মানবতা, সহনশীলতা, ঐক্যবদ্ধতা ও শান্তিপূর্ণ বিশ্বের কথা বলে।