আইটিইউসির বার্ষিক প্রতিবেদন শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে বাজে দেশ বাংলাদেশ
আনোয়ারুল করিম : শ্রমিকের অধিকার বাস্তবায়নের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে নি¤œ ১০টি দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক শ্রম অধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি ভিয়েনাভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন’ (আইটিইউসি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ১০টি দেশের ক্রমানুসারে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে প্রথমেই স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। পুলিশের বর্বরতা, গণগ্রেফতার ও বৈষম্যকে বাংলাদেশে শ্রমিক সংগঠনের ওপর নির্যাতনের প্রধান দিক হিসেবে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
‘আইটিইউসি গ্লোবাল রাইটস ইনডেক্স ২০১৭’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের ওপর সরকার ও নিয়োগকর্তার চাপিয়ে দেয়া অব্যাহত ভোগান্তির কারণে বাংলাদেশ রেটিংয়ে সর্বোচ্চ ৫ পয়েন্ট পেয়েছে, যার অর্থ হলো- শ্রমিকদের ‘অধিকারের কোনো নিশ্চয়তা নেই’। আইটিইউসির মহাসচিব শারান বারো বলেন, ‘অনেক দেশেই করপোরেট স্বার্থের নিচে পড়ে আছে মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার।’
শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে বাজে ১০ দেশের তালিকায় আরও রয়েছে কলাম্বিয়া, মিশর, গুয়াতেমালা, কাজাখস্তান, ফিলিপিন্স, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমারও রেটিং ৫ পেয়েছে; নেপাল ও শ্রীলংকা ভাল অবস্থানে রয়েছে। এই দু’টি দেশের রেটিং ৩, যার অর্থ ‘সেখানে নিয়মিত অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নেই’।
পুলিশের বর্বরতা, গণগ্রেপ্তার ও বৈষম্যকে বাংলাদেশে শ্রমিক সংগঠনের ওপর নির্যাতনের প্রধান দিক হিসেবে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের উদাহরণ হিসেবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে। সে সময় সপ্তাহজুড়ে চলা শ্রমিক ধর্মঘটের পর ৩৫ জন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ও শ্রমিক অধিকারকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং এক হাজারের বেশি শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। ওই ধর্মঘটের পর বিজিএমইএ ৫৯টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রেখেছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ওই ঘটনায় উইন্ডি অ্যাপারেলস ও ফাউন্টেন গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড ২৩৯ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে এবং হা-মীম গ্রুপ সাতটি মামলা করে, যাতে হয় হাজারের বেশি শ্রমিককে আসামি করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আইটিইউসি বলছে, “২০১৭ সালের জানুয়ারির শুরুতে একহাজার ৬০০ জনের বেশি শ্রমিক বরখাস্ত করেছে এবং ৬০০ শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।” ধর্মঘটীদের ঘরে ফিরতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদেশ এবং তাদের বিরুদ্ধে শ্রম প্রতিমন্ত্রীর কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেওয়ার বিষয়টিও আমলে নিয়েছে আইটিইউসি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে পদ্ধতিগতভাবে এবং ব্যবহারিক পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্য বিরাজমান রয়েছে। আইইউটিসি বলেছে, ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতির বাধ্যবাধকতার কারণে বাংলাদেশের সাড়ে চার হাজার তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ কারখানায় আংশিকভাবে নিবন্ধিত ইউনিয়ন আছে। তার সঙ্গে জটিল নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও ইউনিয়নের নিবন্ধন বাতিলের ক্ষমতার বিষয়ে সরকারের ব্যাখ্যা স্পষ্ট না হওয়ায় উপযোগী পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না। ট্রেড ইউনিয়ন বিরোধী নীতির কারণে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতির উদাহরণ দিতে গিয়ে বহুজাতিক জ্বালানি কোম্পানি শেভরনের কথা উল্লেখ করেছে আইইউটিসি। ২০১৫ সালের মে মাসে ইউনিয়ন গঠনের চেষ্টার পর ২০১৬ সালের ডিসেম্বর ১৪৫ শ্রমিককে বরখাস্ত করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, হাবিব ফ্যাশনস নামে পোশাক কারখানার কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের চেষ্টা আটকে দেয় এবং তারপর ২০১৬ সালের আগস্টে কারখানা বন্ধ করে দেয়। ট্রেড ইউনিয়নবিরোধী কর্মকা-ের প্রমাণ হিসেবে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বরগুনায় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা হায়দার আলী হত্যার কথা উল্লেখ করেছে আইটিইউসি। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ