রাষ্ট্রপতি ভবন ছেড়ে যাবেন প্রণব, থেকে যাবে এক বড় আক্ষেপ আর বেদনা
ডেস্ক রিপোর্ট : ২৫ জুলাই, ২০১২। জীবনের সেরা সম্মানটা পেয়েছিলেন তিনি। ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে পা রেখেছিলেন রাইসিনা হিলের রাষ্ট্রপতি ভবনে। সঙ্গে এসেছিলেন দেশের ফার্স্ট লেডি প্রণব-জায়া শুভ্রা মুখোপাধ্যায়। ২৪ জুলাই, ২০১৭। শেষ হবে রাষ্ট্রপতি পদে থাকার মেয়াদ। নিয়ম মেনে পরবর্তী রাষ্ট্রপতিকে দায়িত্ব অর্পণ করে বিদায় জানাতে হবে রাষ্ট্রপতি ভবনকে। কিন্তু এবার যেতে হবে একা। দীর্ঘ দিনের জীবনসঙ্গী শুভ্রা মুখোপাধ্যায় আর নেই। এবেলা
মাঝে আরও একটা অভিশপ্ত তারিখ রয়েছে। ১৮ অগস্ট, ২০১৫। সেদিনই চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন চরম বার্তাটি। জুলাই মাসটা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জীবনে বড় দাগ কেটে রাখবে। একটা জুলাই মাসে যশোরের মেয়ে শুভ্রাকে নিজের জীবনে নিয়ে এসেছিলেন স্ত্রী হিসেবে। আর একটা জুলাইয়ে নিয়ে এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি ভবনে ফার্স্ট লেডি সম্মান দিয়ে। কিন্তু এই জুলাইয়ে যখন তিনি দেশের প্রথম নাগরিক তকমা মুছে পুরনো জীবনে ফিরবেন তখন সঙ্গে থাকবেন না ৫৮ বছরের জীবনসঙ্গী। ১৯৫৭ সালের ১৩ জুলাই বীরভূমের মিরাটি গ্রামের প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিবাহ হয়েছিল যশোর জেলার (বর্তমান বাংলাদেশের নড়াইল জেলা) ১৭ বছরের শুভ্রার সঙ্গে। অনেক রাজনৈতিক উত্থানপতন গিয়েছে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জীবনে। যোজনা কমিশনের চেয়ারম্যান থেকে অর্থমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী অনেক পদ সামলেছেন তিনি। অন্য দিকে, নয়াদিল্লির ১৩ নম্বর তালকোটরা রোডের কর্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায় সামলেছেন সংসার। বড় করেছেন তিন সন্তানকে। সেই সঙ্গে চলেছে সংস্কৃতি চর্চা। রবীন্দ্র সঙ্গীত আর চিত্রশিল্পী হিসেবে তারও কম খ্যাতি ছিল না। গড়েছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ট্রুপ ‘গীতাঞ্জলী।’ দুর্গাপুজোয় নিয়ম করে প্রণববাবুর চন্ডীপাঠের কথা সবাই জানেন। কিন্তু তালকোটরার বাড়িতে বই, ছবি, হারমোনিয়াম, পিয়ানো, তবলা, তানপুরা, ইজেল, পেন্টিং ব্রাশ, ক্যানভাস সব ছিল তার সঙ্গী। জুতো সেলাই থেকে চ-ীপাঠ তো বটেই সেই সঙ্গে মাছের ঝোলের ফোঁড়ন, বাজারের খুঁটিনাটি, সবই সামলাচ্ছেন তিনি। রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে এতটা করতে না হলেও ঘনিষ্ঠরা জানেন সব কিছুতেই নজর ছিল তার।
রাষ্ট্রপিত ভবনেও নিয়ে গিয়েছিলেন তানপুরা, হারমনিয়াম, ছবি আঁকার সরঞ্জাম। সে সবের মধ্যেই প্রোটোকল মেনে বিদেশ সফর সবই করতে হয়েছে। স্বামীকে সঙ্গে দিয়েছেন। ভারতের প্রথম মহিলা নাগরিক হিসেবে ঘুরে এসেছেন বাংলাদেশে ছেলেবেলার গ্রাম থেকে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় অবসর জীবনে পাবেন না জীবনের সব থেকে বড় সঙ্গীকে।
সেই আক্ষেপ তো থেকেই যাবে। নিজের সংসার থেকে নিয়ে এসেছিলেন পাঁচ বছর সময়কালে জীবনের এই শ্রেষ্ঠ সফরে। কিন্তু ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারলেন না। মাঝপথেই যে থমকে গিয়েছে সহযাত্রা। সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ