ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঈদের ছুটি না দেয়ায় কালোব্যাজ পরে নামাজ পড়ার আহ্বান
ডেস্ক রিপোর্ট : ঈদের ছুটি না দেয়ার অভিযোগ তুলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুপরিচিত ফুরফুরা শরিফ দরগার পীর তোহা সিদ্দিকী সে রাজ্যের মুসলমানদের কালোব্যাজ পরে ঈদের নামাজ পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে রাজ্যেরই এক মন্ত্রী ও মুসলিম নেতা এই আহ্বানকে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় বলে মন্তব্য করছেন। অনেকদিন ধরে দাবি করা সত্ত্বেও ঈদের সময়ে ২দিন ছুটি দেওয়া হচ্ছে না অথচ হিন্দুদের উৎসবগুলোতে ছুটির বহর বেড়েই চলেছে- এর প্রতিবাদ জানাতেই কালোব্যাজ পরার কথা বলছেন ওই পীর।
যদিও আরেকটি মুসলিম সংগঠন বলছে যে তোহা সিদ্দিকীর দাবির সঙ্গে একমত হলেও খুশির ঈদে কালোব্যাজ পরে প্রতিবাদ জানানোর পক্ষপাতী নন তারা। মি. সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর কাছে দাবি করে আসছি যে ঈদের দিন অন্তত ২দিন করে ছুটি দেওয়া হোক। তিনি আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি। অথচ হিন্দু ভাইয়েরা না চাইতেই দূর্গাপূজো, কালীপূজো বা ছটপূজোয় লম্বা ছুটি পাচ্ছেন। উনাদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে সেটা স্বাগত, আমরা খুশি। কিন্তু মুসলমানদের উৎসবের ছুটি কেন একদিন করে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না?’ এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব রোজার ঈদ আর কোরবানির ঈদ। বহু মুসলমান বাইরে কাজ করেন, তবে ঈদের সময়ে বাড়ি ফেরেন। একদিনের মধ্যেই তাদের উৎসবের ছুটি কাটিয়ে কর্মক্ষেত্রে ফিরতে হয়। ‘মুখ্যমন্ত্রী বারে বারেই বলেন যে, তিনি সংখ্যাগুরু আর সংখ্যালঘু উভয়েরই মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সংখ্যালঘু হিসাবে আমরা তো কিছুই পাচ্ছি না।’ এরই প্রতিবাদ জানাতে তিনি নিজে কালোব্যাজ পরে ঈদের নামাজ পড়বেন বলে তিনি জানান। ‘আমার সব ভক্তকে বলবো, বাংলার সব মুসলমান ভাইদেরও বলবো, আপনারা কালোব্যাজ পরে ঈদগাহে গিয়ে নামাজ পড়ুন’। তবে মি. সিদ্দিকীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রীর সুসম্পর্ক রয়েছে, এমনটাই সবাই জানেন। তবুও মমতা ব্যানার্জীকে বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে এরকম একটা প্রতিবাদ কেন তিনি করছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তোহা সিদ্দিকী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক থাক বা না থাক, একজন ধর্মগুরু হিসাবে মুসলমানদের সুবিধা-অসুবিধাটা তুলে ধরা আমার দায়িত্ব। তার জন্য সত্য কথাটা বলতে আমার কোনো সমস্যা নেই।’ তবে রাজ্যের মন্ত্রী ও জামিয়াত-এ উলেমা-এ হিন্দের নেতা মৌলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলছেন, ঈদের দিনে কালোব্যাজ পরার ডাক দেওয়াটা দায়িত্বহীনতার পরিচয়। তিনি যদি ঈদের দিন কালোব্যাজ পরে নামাজ পড়ার আহ্বান দিয়ে থাকেন, সেটা তার দায়িত্বহীনতার পরিচয়। এতে সমাজের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াবে। আর শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা ভারতেই ঈদে একদিনই ছুটি থাকে। বরং মমতা ব্যানার্জী গতবছর ঈদের ২দিন ছুটি দিয়েছিলেন। আবেদন করলে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। কিন্তু তার বদলে যদি খুশির ঈদের দিন কেউ কালোব্যাজ পরার কথা বলেন, তাহলে দায়িত্বহীনতার পরিচয় ছাড়া আর কী বলব একে?।
তবে ঈদে একদিন ছুটি পাওয়াটা যে মুসলমানদের সত্যিই অসুবিধার কারণ সেটা মানছেন অনেকেই। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের প্রধান মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, এটা ঠিকই যেসব মুসলমান বাইরে কাজকর্ম করেন, তাদের পক্ষে একদিনের জন্য বাড়ি গিয়ে উৎসব সেরে আবার কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়া কঠিন। ২দিন ছুটি তো দেওয়াই উচিৎ। কিন্তু খুশির ঈদের দিন কোনোরকম প্রতিবাদ বা কালোব্যাজ পরাটাও আমরা মানতে পারবো না। খুশির দিনে কেন শোকজ্ঞাপনের প্রতীক কালোব্যাজ পরবো? এটা তো শরিয়ত সম্মত নয়। শুধু কর্মরত ব্যক্তিরাই নন, যে সব ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেন, তাদেরও একদিনের মধ্যে ঈদের উৎসব শেষ করে ফিরে আসা কঠিন হয় বলে মনে করেন মি. কামরুজ্জামান। সূত্র: আনন্দবাজার, সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ