সারাদেশে বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলীসহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬
মাসুদ রানা : গতকাল শুক্রবার সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বিভিন্নভাবে ৬ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী ও সাভারে দুর্ঘটনায় বৈজ্ঞানিক, প্রকৌশলী ও শিশু নিহত হয়েছেন তাছাড়া গোপালগঞ্জে ১ জন, বগুড়ায় ২ জন বিভিন্নভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা যায়,
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়করে বগুড়ার শরেপুর অংশে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে অজ্ঞাতনামা দুই নারী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন। গতকাল শুক্রবার উপজেলার মহিপুর পিসি ভাটা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলইে ওই দুই নারী নিহত হন। এতে আহত হন আরও অন্তত ১০ জন। আহতদরে মধ্যে চারজনের অবস্থা আশংকাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। পরে শেরপুর ফায়ার সার্ভিস, থানা পুলিশ ও লোকজন আহতদর উদ্ধার করেন।
সাভার প্রতিনিধি জানান, সাভার ও আশুলিয়ায় পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ এক প্রকৌশলী নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর ও যাদুরচড় এলাকায় পৃথক এ দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলোÑ উত্তরার র্যামকন ডেভেলপমেন্ট-এর প্রকৌশলী আব্দুস সোহাগ এবং অপর শিশুর নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসাতালের মর্গে প্রেরণ করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ঢাকা মোটরসাইকেল যোগে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী যাচ্ছিল প্রকৌশলী সোহাগ। গতকাল দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আশুলিয়ার নবীনগর এলাকায় পৌঁছলে পেছন দিক আসা যাত্রীবাহী বাস তাকে বহন করা মোটরসাইকেলে পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে প্রকৌশলী মোটরসাইকেল ছিটকে মহাসড়কে পড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই মারা যায়। খবর পেয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার এবং যাত্রীবাহী বাস ও মোটরসাইকেল জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের যাদুরচড় এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের চাঁপায় অজ্ঞাত পরিচয় এক শিশু নিহত হয়েছে। এ সময় স্থানীয়রা উত্তেজিত বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ওই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, রাজশাহীর মোহনপুরে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার-রাজশাহীর (বিসিএসআইআর) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মনসুর রহমান মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার ভোরে উপজেলার বিদ্যাধরপুর ও কালিনা সেতুর কাছে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ড. মনসুর রহমান বিসিএসআইআর এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। এছাড়া তিনি প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্বপালন করছিলেন। ড. মনসুর রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকায় বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁর ধামইরহাটের মঙ্গলবাড়ি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ড. মনসুর রহমানের ব্যক্তিগত গাড়িচালক শরিয়ত আলী। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। শরিয়ত আলী নগরীর নওদাপাড়ার এলাকার আজাহার আলীর ছেলে।
মোহনপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ জানান, ভোরে মোহনপুরের বিদ্যাধরপুর ও কালিনা সেতুর কাছে এসে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। এ সময় গাড়িটি রাস্তার পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কায় সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে ড. মনসুর রহমান ও তার গাড়িচালক আহত হন। মুমূর্ষু অবস্থায় ড. মনসুর রহমানকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে চালক রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গাড়িচালক শরিয়ত আলীর বরাত দিয়ে ওসি বলেন, সেহরি খেয়ে ড. মনসুর রহমান ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার নিয়ে গ্রামের বাড়ি নওগাঁর ধামুইরহাটের মঙ্গলবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে পবার নওদাপাড়া মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করেন। সেখানে রেবিয়ে বিদ্যাধরপুর ও কালিনা সেতুর কাছে দুর্ঘটনায় পড়েন। এ নিয়ে আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান ওসি।
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মুকসুদপুরের চর প্রসন্নদীতে শুক্রবার সকালে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত ও অপর ১ জন আহত হয়েছে। নিহত ও আহতরা দুজন স্বামী-স্ত্রী। তাদের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপায় বলে জানা গেছে। তারা ইঞ্জিনচালিত একটি নতুন থ্রি-হুইলার গাড়ি কিনে নিয়ে বাড়িতে যাবার পথে খুব ভোরে ঘটনাস্থলে দুর্ঘটনায় পড়ে। তাদের গাড়িটি রাস্তার খাদে পড়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে পেছন থেকে হয়তো কোনো দ্রুতগামী যান তাদের গাড়িটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই গাড়ির চালক স্বামী নুরুল ইসলাম (৩০) নিহত হয় এবং স্ত্রী নুরুন্নাহারও (২২) এ সময় মারাত্মক আহত হয়। আহত নুরুন্নাহারকে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমম্পেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের এসআই জাহাঙ্গির হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।