কথার রাজনীতি কি জনকল্যাণমূলক হতে পারে?
রবিউল আলম
রাজনীতির একটি কথা বলতে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে জাতির জনককেÑ এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। একটি কথায় বাঙালির স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। মুক্তি পেয়েছে সাড়ে সাত কোটি মানুষ। জনস্বার্থের এই একটি কথা বলতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯ বছর। পরাধীনতার শিকল ছিল ২২৬ বছর। রাজনীতির কথা বলতে হয় জনস্বার্থ বিবেচনা করে, জনগণের স্বার্থ থাকলে জনগণ আপনার কথা অর্থ বুঝতে পারলে, বুঝাতে পারলে একদিন না একদিন দাবি আদায় হবেই। স্বাধীনতার চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে। রাজনীতির কথা যদি হয় ছন্নছাড়া তবে জনগণের কি করার আছে। একটি কথা বোঝার আগে যদি আর একটি কথা বলা হয়, তবে জনগণের কি করার আছে। আর রাজনীতির কথা যদি হয় নিজ স্বার্থে, নিজ দলের স্বার্থে তবে তো কথাই থাকে না। ম্যাডাম খালেদা জিয়ার কথার কি আর শেষ আছে, দাবিরও শেষ নেই। দাবি তোলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আন্দোলন করলেন, দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও হলো, কোনো একজনের পরামর্শে ৯৩ দিন ঘর ছেড়ে পরবাসে দিন কাটালেন।
এক সময় বাড়ি ফিরে বললেন, তত্ত্বাবধায়ক হোক আর যে নামেই হোক নিরপেক্ষ সরকার চাই। কিছুদিন পার হতে না হতেই এখন বলছেন, সহায়ক সরকার চাই। ম্যাডাম, একটি কথার অর্থ বুঝতে যে বাঙালির ১৯ বছর লাগে, পরাধীনতার শিকল ভাঙতে ২২৬ বছর পার করেছে সেই বাঙালিকে যদি একের পর এক তকমা দেওয়া হয় তবে জনগণ কোনো কথার অর্থ বুঝে আন্দোলন করবে। ম্যাডাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেক কষ্টে জনগণ বুঝেছিল, আপনারা বুঝিয়েছিলেন। আবার আপনারা স্বীকারও করে নিলেন ভুল হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনার নিরপেক্ষ হয় না, নিরপেক্ষ থাকে না, থাকতে পারে না। তবু কি পৃথিবীতে নির্বাচন হয় না। তারপরেও কি সরকার বদল হয়নি।
জনসমর্থন থাকলে কোনো নির্বাচনার কমিশনার কি জনসমর্থন আটকিয়ে রাখতে পারেন, না পেরেছে? তবুও ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে নিজ দলের যে ভুল করেছিলেন তার খেসারত দিতে হচ্ছে আপনারই নেতা-কর্মীদের। সহায়ক সরকার বলতে কি বুঝিয়েছেন জানি না, হলফ করে বলুন আপনি বুঝেছেন কিনা। আমার তো মনে হয় সহায়ক সরকার জনগণকে বোঝাতে বোঝাতে এই নির্বাচনও পার হয়ে যায় কি না। ম্যাডাম, আপনি অনেক সহজ-সরল মানুষ, আমার মতো সাত-পাঁচ বুঝেন না। যারা আপনাকে বোঝায় তাদের আসল উদ্দেশ্য কি অনুমান করতে পারেন। রাজনীতির একটি কথার জন্য সুদীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হয়, আর প্রতিমুহূর্তে কথা দিয়ে স্বপ্ন দেখিয়ে আপনাকে ক্ষমতায় চেয়ারে বসানো হয়। ম্যাডাম, এরা কারা, কারা আপনাকে দিয়ে এত কথা বলায়। আপনিও বলতে বাধ্য হচ্ছেন, কি এমন রহস্য আছে যে কথার কোনো একটা বাস্তবায়ন করতে রাজপথে তাদেরকে পাওয়া যায় না, রাজপথে থাকে না।
আমি জানি না তারা কারা, আমার চেয়ে আপনি ভালো বলতে পারবেন। ম্যাডাম, রাজনীতি যদি এত সহজ হতো তবে এদেশের সবাই রাজনীতি করত, রাজনীতি ত্যাগের বিষয়, ভোগের নয়। কথার ফুলঝুরি শোনাবেন, রাস্তায় আসবেন না, জনগণের দাবি কি তা বোঝাবেন না, শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, নিজের ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে রাজনীতি করবেন। তাই আমাকে বলতে হচ্ছে, কোন রাজনীতি করবেন। রাজনীতির কথা বলবেন, জনকল্যাণের কথা বলবেন, নাকি কথার রাজনীতি করবেন তা আপনারই সিদ্ধান্ত।
লেখক: ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান