পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার হবে কী?
ডা. জাকির হোসেন
টানা বর্ষণে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এ সংবাদ নতুন নয়। তবে ঘটনার পরপরই বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ধ্বংসলীলায় চাপা পড়া মানুষের ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকে। উদ্ধার কাজ যতই এগিয়ে যাচ্ছিল মৃত্যুর মিছিল আস্তে আস্তে ততই লম্বা হতে থাকে। যখন থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পাহাড়ে বাঙালিদের পুনর্বাসন শুরু হয় তখন থেকে এই সকল পাবর্ত্য জেলাগুলোর উঁচু-নিচু বিভিন্ন পাহাড় কেটে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় অনেক বসতি গড়ে ওঠে। বিগত কয়েক বছর যাবত ধারাবাহিকভাবে এই ধরনের ধ্বংসলীলায় বহু প্রাণহানি ঘটে চলছে। এবার বড় আকারের এই দুর্ঘটনা ঘটার পরই সেনাবাহিনীর একটি উদ্ধারকারী দল আক্রান্তদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেদের বাহিনীর অনেককেই দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। ঘটনার পরপরই বিভিন্ন মিডিয়া এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা একে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঢালাওভাবে প্রচার শুরু করে। কিন্তু প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের নাকের ডগায় অবৈধভাবে এই সকল পাহাড় কেটে দিনের পর দিন তারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করে এসেছে কেন এতদিন তাদের নজরে আসেনি এমনকি অতি বর্ষণ শুরু হবার পরও কেন এই সকল ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে স্থানীয় জনগণকে সরিয়ে নেওয়া হয়নি?
ঘটনার পরপরই উদ্ধারকারী বিভিন্ন সংস্থা খুব জোরালোভাবে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে। কিন্তু এই সকল দুর্ঘটনায় মাটিচাপা পড়ার পর বেঁচে থাকার আশা একেবারেই ক্ষীণ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনেকগুলো মেডিকেল টিম গঠন করা হয় আহতদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। সকল চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়। প্রজ্ঞাপণে ঘোষণা দেওয়া হয় চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো গাফিলতি মেনে নেওয়া হবে না। প্রশ্ন হচ্ছেÑ যাদের গাফিলতির কারণে এই শতাধিক নিরীহ প্রাণ অকাতরে ঝরে গেল তাদের কি হবে? তাদের এই গাফিলতি কী প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে চালিয়ে দিয়ে এ ধরনের মৃত্যুর মিছিলে আরও নিরীহ জনগণকে সামিল করবেন? এভাবে আর কতদিন বাঙালির দৃষ্টিশক্তিকে অন্যদিকে ফিরিয়ে নিয়ে দুর্নীতিবাজ প্রশাসনিক কাঠামোর খপ্পরে নিরপরাধ মানুষকে বলিদান দিতে হবে।
প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা, কারখানায় অগ্নিকা-, নৌপথে লঞ্চডুবির ঘটনায় কত মানুষ বড় অবেলায় ঝরে পড়ছে তার ইয়ত্তা নেই। ঘটনা ঘটার পর কিছুদিন তোড়জোড় শোনা গেলেও আসল অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে পর্দার আড়ালে। প্রকৃত দোষীদের এভাবে আড়াল করার প্রবণতার কারণে এই ধরনের মানবসৃষ্ট দুর্যোগ দিনে দিনে বেড়েই চলছে। মাঠে ময়দানে বক্তব্য-বিবৃতিতে দেশপ্রেমের কথা না দেখিয়ে অন্তর থেকে এই নিরীহ মানুষগুলো ভালবাসলে, সমাজের প্রতি নিজেদের দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে পারলে, প্রকৃত অপরাধীদের যথাযথ বিচারের আওতায় আনতে পারলে এ ধরনের মানবসৃষ্ট দুর্যোগ থেকে বহু প্রাণ রক্ষা করা যাবে।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান