ঘুমের ঘোরে ট্রাক চালাচ্ছিলেন হেলপার ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ঈদযাত্রায় রংপুরে প্রাণ গেল নারী শিশুসহ ১৭ জনের
মোস্তাফিজার রহমান বাবলু : পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা হলো না তাদের। গাজীপুর থেকে লালমনিরহাটে সিমেন্ট ভর্তি ট্রাকে চেপে বাড়ি ফেরার পথে রংপুরের পীরগঞ্জে ট্রাক উল্টে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় নারীশিশুসহ ১৭ জনের। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ২৩ জন। এদের অধিকাংশ নিরীহ পোশাক শ্রমিক ও রিকশাচালক। চালকের আসনে বসা হেলাপারের ঝিমুনির কারণেই শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে ট্রাকের যাত্রীরা জানান।
আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার এবং আহতদের প্রত্যেককে চিকিৎসা খরচের জন্য ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নিহতদের মৃতদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত ১৭ জনের মধ্যে ১৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রবিউল ইসলাম, নাসিদা আক্তার, আজিজুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, জসিম উদ্দিন, আনিছুজ্জামান, সুপর্ণা, কোহিনুর ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, মজনু মিয়া, সাদ্দাম হোসেন, মুনির হোসেন, রফিকুল ইসলাম ও খলিল মিয়া। নিহতদের মধ্যে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় ১২ জন, আদিতমারী উপজেলায় ২ জন, পার্শ¦বর্তী কুড়িগ্রাম জেলায় ২ জন ও ময়মনসিংহ জেলায় ১ জনের বাড়ি বলে জানা গেছে। গতকাল শনিবার সকালে পীরগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-রংপুর কলাবাড়ী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার রাতে বাসের টিকিট না পাওয়ায় ৪০ জন ঘরমুখো মানুষ ঢাকা থেকে একটি সিমেন্ট ভর্তি ট্রাকে চেপে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ থানায় নিজ গ্রামে ঈদ করতে ফিরছিলেন।
দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া শহিনুর ইসলাম জানান, তারা গাজীপুর থেকে সিমেন্ট ভর্তি ট্রাকটিতে উঠেছিলেন। চালক রাতভর গাড়ি চালান। তিনি মাঝে মাঝেই ঝিমুচ্ছিলেন। দুর্ঘটনাস্থলের কয়েক কিলোমিটার আগে এসে চালক গাড়ি চালানোর জন্য ট্রাকের হেলপারকে দেন। হেলপার প্রথমে ভালোভাবে চালালেও পরে তিনিও ঝিমুনি শুরু করেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি ট্রাকের কেবিনে ছিলেন। এ কারণেই বেঁচে গেছেন। দুর্ঘটনার পর চালক ও সহকারী দুইজনেই পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে রংপুর হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বীরেন চন্দ্র মহাপাত্র বলেন,নিহতদের বেশির ভাগই তৈরি পোশাক শ্রমিক ও রিকশাচালক। ঈদে গাজীপুর থেকে ট্রাকে করে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ ও হাতীবান্ধা উপজেলায় বাড়ি ফিরছিলেন তারা। চালকের ঝিমুনির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি : এ দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রংপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আব্দুল কুদ্দুসকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন রংপুর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান। সম্পাদনা : হুমায়ুন কবির খোকন