তালাক সম্পর্কে ইসলামের মূল দৃষ্টিভঙ্গি
হাবিবুর রহমান: বিভিন্ন হাদিসে এই বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গির কথা স্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহপাকের কাছে বৈধ বিষয়সমূহের মধ্যে সবচেয়ে অপ্রিয় হল তালাক। (আবু দাউদ)
অন্য একটি হাদিসে এসেছে, মাহমূদ ইবনে লবীব বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জানানো হয় যে, এক ব্যক্তি একই সময়ে তার স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করেছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) রাগে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, তোমরা কি আল্লাহর কালাম নিয়ে খেলা শুরু করে দিয়েছ, অথচ আমি তোমাদের মধ্যে বর্তমান? বর্ণনাকারী বলেন, তাকে এতই রাগান্বিত মনে হচ্ছিল যে, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমি কি তাকে হত্যা করব না? (নাসায়ি)
আরো একটি হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি মাসিক ঋতুচক্র চলাকালে তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেন। তার পিতা ওমর (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) কে এ ব্যাপারে অবহিত করেন। তা শুনে তিনি ক্রোধান্বিত হন এবং বলেন, তাকে ফিরিয়ে নাও এবং রেখে দাও; যতক্ষণ না সে ঋতু থেকে পবিত্র হয়। যদি সে তার মন পরিবর্তন না করে তবে যেন পরবর্তীতে তালাক দেয়। সে এমন পবিত্রতার সময়কালে তাকে তালাক দেয় যাতে সে তাকে স্পর্শ করেনি। এটি অপেক্ষার সময় যা আল্লাহ তাআলা নারীদের তালাক প্রদানের জন্য নির্ধারণ করেছেন। (বুখারি, মুসলিম)
অন্য আরো একটি হাদিসে এসেছে, মুআয ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে মুআয! পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার কাছে গোলাম আযাদ করার চেয়ে প্রিয়তর কোন কিছু তিনি সৃষ্টি করেননি। আর আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে তালাক প্রদানের চেয়ে অপ্রিয় কোন কিছু সৃষ্টি করেননি। (দারে কুতনী)
আমাদের সমাজে দিন দিন তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের মত ঘটনা বেড়েই চলেছে, বিভিন্ন জন এই বিষয়ে বিভিন্ন মন্তব্যও করছেন। কিন্তু উপরোল্লেখিত হাদিসগুলো থেকে স্পষ্টই বোঝা যায় এই বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিটা ঠিক কি? তালাক প্রথমত, তা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সমস্যার সুরাহা করার জন্যে দুইজন মধ্যস্থতাকারী আহবান করে। দ্বিতীয়ত, যদি তা ব্যর্থ হয়, তাহলে তা স্বামী ও স্ত্রীকে তিন মাসের একটি অপেক্ষার সময় (ইদ্দত) পার করতে বলে।
তা তাদেরকে সমঝোতার অন্য একটি সুযোগ প্রদান করে। তৃতীয়ত, যদি স্বামী চূড়ান্তভাবে তালাক প্রদানের ইচ্ছা করে তবে তা স্ত্রীর সম্মান ও মর্যাদার পাশাপাশি তার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে। চতুর্থত, ইসলাম তালাক প্রদানকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় ঘোষণার মাধ্যমে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদা ও পবিত্রতার অনুভূতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। এসব মহৎ শিক্ষার কারণে ইসলামে বিয়ে একটি খুব টেকসই ও সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠান এবং তালাকের মাধ্যমে তা খুব কমই নিঃশেষ হয়ে যায়। লেখক: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী