স্ত্রীর ওপর স্বামীর অধিকার
ইসমাঈল আনিস: স্ত্রীর ওপর আবশ্যক হলো, স্বামী যখন তাকে কোনো বিষয়ের আদেশ করবে, শরীয়ত বহির্ভূত-গর্হিত কাজ না হলে তা পালন করা রাসুল। (সা.) ইরশাদ করেন, নারীদের মধ্যে স্ত্রী হিসেবে সর্বোত্তম তো সেই, যখন স্বামী তাকে দেখে, স্বামীর দিল খুশিতে ভরে ওঠে। স্বামী কোন বিষয়ের আদেশ করলে সে তা পালন করে এবং স্বামী কোন প্রয়োজনে তার থেকে দূরে গেলে সে স্বামীর সম্পদ ও নিজ আব্রুর হেফাজত করে। অন্য এক হাদিসে এসেছে, কোনো স্ত্রীলোক যদি পাঁচওয়াক্ত ফরজ নামাজ যথানিয়মে পড়ে, রমজানের রোজা রাখে, নিজ আব্রুর হেফাজত করে, স্বামীর আনুগত্যে (শরীয়ত স্বীকৃত বৈধ বিষয়ে) নতশীর থাকে এবং তার কথা মেনে চলে, উক্ত স্ত্রীলোক অবশ্যই আপন রবের জান্নাতে প্রবেশ করবে। অপর এক হাদিসে এসেছে, যদি কোনো নারী জান্নাতের আশাবাদী হয়, তার ওপর আবশ্যক হলো, আপন রবের সন্তুষ্টি অর্জন করা। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি ততক্ষণ পর্যন্ত অর্জন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট না হবে। মোটকথা: এধরণের অসংখ্য হাদিস রাসুল (সা.)-এর পবিত্র জবানে নারীদের ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে। স্বামীর আনুগত্য করা, তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, তার সম্পদের সংরক্ষণ ও নিজ আব্রুর হেফাজতের ব্যাপারে বহুস্থানে তাকিদপূর্ণ বাক্য বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং স্বামীর সম্মান এবং গুরুত্ববহতার প্রকাশ হাদিসে এভাবে হয়েছে যে, রাসুল (সা.) বলেন, যদি আল্লাহ তায়ালা ব্যতিত অন্যকারো সামনে নতশীর হওয়ার বৈধতা দিতাম, তাহলে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকেই সিজদা করার বৈধতা দিতাম; স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সীমাহীন হকের কারণে।
স্বামীর প্রথম হক; স্ত্রীর সঙ্গে একান্তমিলন: স্বামী যদি স্ত্রীর কাছে জৈবিক চাহিদা পূরণের আকাক্সক্ষী হয়, স্ত্রীর নারাজ হওয়া, অস্বীকার করা অনুচিৎ। যদিও স্ত্রী রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকে, চুলোয় আগুন জ্বলতে থাকে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, স্বামী যদি চলন্ত উটের ওপরও স্ত্রীর সঙ্গে একান্ত মিলনের প্রত্যাশী হয় আর স্ত্রী এতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে উক্ত স্ত্রী কল্যাণ হতে এমনভাবে বহিষ্কৃত হয় যেভাবে গর্ত হতে সর্প বেরিয়ে আসে। স্ত্রীর সর্বদা সাজ-সজ্জায় পরিপাটি থাকা: স্ত্রী সর্বদা স্বামীর সামনে সাজগোছে পরিপাটি থাকবে। নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে। সদা হাসোজ্জ্বল, সহাস্যবদন থাকবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে নারী স্বামীর জন্য সর্বদা সাজগোছে পরিপাটি থাকবে, সে দু’শো বছরের মকবুল ইবাদতের ছওয়াব অর্জন করবে।
স্বামীর অনুমতি ব্যতিত নফল রোজা না রাখা: স্ত্রীর জন্য আবশ্যক হলো, নফল রোজা, মান্নতের রোজা, শাবানের রোজা, শাওয়ালের ছয় রোজা, আশুরা-মহররমের রোজা ইত্যাদি স্বামীর অনুমতি ব্যতিত না রাখা। শুধু রমজানের ফরজ রোজা স্বামীর অনুমতি ছাড়াই রাখতে পারবে।
স্বামী নারাজ হলেও রমজানের ফরজ রোজা রাখতে হবে। কেননা, রমজানের রোজা আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের ওপর ফরজরূপে বিধান করেছেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে নারী স্বামীর অনুমতি ব্যতিত নফল রোজা রাখবে, সারাদিন পান-আহারে কষ্ট করা ব্যতিত তার কোন পূণ্যই অর্জন হবে না। এথেকেই প্রতিয়মান হয় যে, রমজানের রোজা ব্যতিত অন্যান্য রোজার জন্য স্বামীর অনুমতি আবশ্যক। লেখক: শিক্ষার্থী, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত