মা-বাবার প্রতি সন্তানের কর্তব্য
মোস্তফা কামাল গাজী: মা-বাবা আমাদের অস্তিত্বের মাধ্যম। তারা পরম শ্রদ্ধার পাত্র। বাধ্য সন্তানের জন্যে মা-বাবা হলেন চোখের মণি, হৃদেয়রর স্পন্দন। একজন মা গর্ভে ধারণ থেকে নিয়ে প্রতিটি পদে পদে সন্তানকে সযতেœ আগলে রাখেন। শত কষ্ট সহ্য করেও সন্তানকে তা বুঝতে দেন না। কখনো সন্তানের গায়ে বিন্দু পরিমাণ আঁচড় লাগতে দেন না। বাবাও নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে নেমে পড়েন আয় উপার্জনের কাজে।
হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খেটে পূরণ করেন সন্তানের আবদার। সন্তানের মুখে এক চিলতে হাসি দেখার আশায় রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কঠোর পরিশ্রম করেন। এরপরও মা- বাবার ঘাম ঝরানো পরিশ্রম বুঝে না সন্তান। তাদের নিঃস্বার্থ আদর, স্নেহ আর ভালোবাসার কোনো মূল্য দেয় না। শয়তানের প্ররোচনায় পরে মা-বাবার অবাধ্য হয় । তাদেরকে দেয় নিদারুণ কষ্ট। আল্লাহ তাআলা ও রাসুলুল্লাহ (সা.) মা-বাবাকে কষ্ট দিতে, তাদের অবাধ্য হতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। (বনি ইসরাইল :২৩) এ আয়তে আল্লাহর ইবাদতের সঙ্গে মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে এর গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে।
সন্তান লালন পালনে মায়ের কষ্টের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, মা তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে, অনেক কষ্টে তাকে প্রসব করেছে আর তাকে গর্ভে ধারণ করা ও দুধ ছাড়ানোর সময় ত্রিশ মাস। (লোকমান :১৪) হাদিস শরিফে আছে, এক সাহাবি রাসলুল্লাহ (সাঃ) কে প্রশ্ন করলেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কাজ কোনটি?
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সময় মতো নামাজ পড়া। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, এরপর কোনটি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, এরপর কোনটি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। (বুখারি: ১/৭৬)।
মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহারে রয়েছে অফুরন্ত ফজিলত। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিহিত। (তিরমিজি: ২/১২)
মা-বাবা যখন বার্ধক্যে উপনীত হোন, তখন তারা সন্তান থেকে সেবাযতেœর প্রয়োজন একটু বেশি অনুভব করেন । তখন প্রত্যেক সন্তানের জন্যে মা-বাবার সেবা বেশি করা উচিৎ। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে পিতা-মাতা বার্থক্যে উপনীত হলে তাদের সঙ্গে করণীয় সম্পর্কে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তাদের একজন বা উভয়ে বার্ধক্যে পৌঁছলে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না, তাদেরকে ধমক দিও না, তাদেরকে সম্মান দিয়ে কথা বলো। তাদের সামনে ভালবাসার সঙ্গে ন¤্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলো, হে প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া করো; যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। (বনি ইসরাইল:২৩/২৪)
মাতা-পিতা মারা যাবার পরও সন্তানের ওপর তাদের অধিকার রয়েছে। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এক সাহাবি বলল, হে আল্লাহর রাসুল!
বাবা-মার মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার এমন কোনো উপায় আছে কী, যা আমি অনুসরণ করতে পারি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, হ্যাঁ, চারটি উপায় আছে। তা হলো, ১. তাদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা ২. তাদের কৃত ওয়াদা পূরণ করা ৩. তাদের বন্ধু ও অন্তরঙ্গ ব্যক্তিদের সম্মান করা ৪. তাদের মাধ্যমে তোমার সঙ্গে আত্মীয়তার যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা অক্ষুণœ রাখা। (আবু দাউদ: ৫১৪২) উপর্যুক্ত আলোচনা দ্বারা মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার ও তাদের সেবাযতেœর গুরুত্ব বুঝে আসে। প্রতিটি সন্তানের উচিত বাবা মায়ের সেবা শুশ্রুষা করা।