আলোকিত সমাজের খোঁজে
মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম: পরিবার শুধু একটি উত্তম সামাজিক প্রতিষ্ঠানই নয়, বরং ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার হলো একটি পবিত্র সংস্থা। পরিবারের সুখ, শান্তি এবং সবার পারস্পরিক সম্পর্ক ছাড়াও রয়েছে একটি আইনগত ও সামাজিক দিক। নৈতিক চরিত্র গঠনের প্রকৃষ্ট ক্ষেত্র হলো পরিবার। আর পরিবারের স্বচ্ছতায়ই গড়ে উঠে একটি সুন্দর সমাজ। সামাজিক সম্পর্ক সৃষ্টি ও বৃদ্ধি হয় পরিবারকে কেন্দ্রকরে। পবিত্র কোরআনুল কারিমে পারিবারিক সদস্যদের মুহসিনীন বা প্রাচীর ঘেরা দুর্গে অবস্থানক সুরক্ষিত লোকজনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ইসলামে পরিবার শুধু স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পরিবারের পরিসর আরও ব্যাপক। নিকটাত্মীয়, পাড়া পড়শিও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক, দয়া, করুণা এবং সহানুভূতি তো আছেই, বাড়তি সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বশীলতা প্রশ্নও জড়িত। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পূর্ণসহযোগিতা ও স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধনের ওপর নির্ভর করে পারিবারিক জীবনের সুখ-শান্তিও সর্বাঙ্গীণ উন্নতি; স্বামী-স্ত্রী নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে চললে পারিবার অনেকাংশে সুখ ও শান্তিতে ভরে ওঠে। স্বামী স্ত্রী’র প্রভাবই পড়ে স্বীয় সন্তান-সন্ততি -এর ওপর। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারই হল মানুষগড়ার মূল কেন্দ্র এবং সমাজ গঠনের প্রধান ভিত্তি। এ জন্য পরিবার গড়ার ব্যাপারে ইসলাম বিশেষভাবে যতœবান হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা দাম্পত্য জীবন গঠনের পূর্বশর্ত হিসেবে স্বামীর জন্য বিবাহের আগে স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণের জোগান দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করার কথা বলেছেন। পারিবারিক জীবনে প্রবেশ করার আগেই একজন পুরুষের উচিত তার স্ত্রীর ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের ভরণপোষণ করার মতো আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করা। মহান আল্লাহপাক বলেন, আর সন্তানের পিতার দায়িত্ব যথাবিধি তাদের (মা ও শিশুর) ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা। (সূরা বাকারা, আয়াত-২৩৩)।
সন্তান তার বাবা-মার সাথে ভালো ব্যবহার করবে। হজরত লোকমান(আ:) নিজ পুত্রকে যে মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন পবিত্র কোরআনে, তা উল্লেখ হয়েছে এভাবে- হে বৎস্য! নামাজ কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও, মন্দ ও গর্হিত কাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করো। নিশ্চয়ই এটি দৃঢ়তার কাজ। (সূরা লোকমান, আয়াত-১৭)
প্রতিটি শিশুরই নরম মাটির মতো শৈশবে যে মূল্যবোধ ও আদব আখলাকের পরিবেশে বেড়ে উঠবে, শৈশবে তাদের যে পথের দিকে মুখ করে দেয়া হবে তারা সে পথকেই বেছে নেবে।এ পথই তার পরবর্তী জীবনের স্থায়ী রাহনুমা হয়ে যায়। এ কারণে পরিবারই হচ্ছে একটি শিশুর প্রথমিক বিদ্যালয়। এ সময় মাতা-পিতা নিজেদের অনুসরণীয় ব্যক্তি দিয়ে এবং ধর্মীয় নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের প্রতিপালন করবেন। এটাই বাঞ্ছনীয়। নবী (সা.) বলেছেন, পিতা-মাতার ওপর সন্তানের অন্যতম অধিকার হচ্ছে, তাকে উত্তম আদব শিক্ষা দেয়া এবং সুন্দর একটি নাম রাখা। (বায়হাকি শরিফ)।
ইসলাম বলেছে, তুমি আয় বুঝে ব্যয় কর। দারিদ্র্য যেমন ইসলাম কামনা করে না, অনুরূপভাবে ইসলাম বাহুল্য বর্জনের নির্দেশও রয়েছে। কারণ সীমাহীন দারিদ্র্য অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে কুফরির পথে ধাবিত করে, আবার সীমাহীন প্রাচুর্য পরিবারে অশান্তি ডেকে আনে।
ইসলাম আমাদেরকে প্রতিদি বিষয়েরই দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। সুতরাং এই সমাজকে নতুনভাবে রূপ দেওয়ার জন্য নিরলস চেষ্টা করলে আমাদের এই সমাজের শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, নেতৃত্ব তৈরি ও বিচার ব্যবস্থা সবই হবে মানবতার জন্য। আর এই সমাজই হবে দুনিয়ায় শান্তির ও আখেরাতের মুক্তি উপায়।
আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামী সমাজ গড়ার কাজে আত্মনিয়গ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।