মুসা (আ.)-এর ধর্মে নামাজের বিধান
ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ: পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, (আমি মুসা ও তার ভাইয়ের কাছে ওহি পাঠালাম যে) তোমরা তোমাদের গৃহগুলোকে ‘ইবাদতগৃহ’ করো। নামাজ কায়েম করো এবং মুমিনদের সুসংবাদ দাও। সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৮৭ (শেষাংশ)
তাফসির : মুসা (আ.)-এর আমলে এই বিধান ছিল যে প্রার্থনালয়ে গিয়ে প্রার্থনা করতে হতো। এটি ছিল বাধ্যতামূলক। ফেরাউনের লোকেরা সেগুলো ধ্বংস করে দেয়। ফলে বনি ইসরাইল দিশাহারা হয়ে পড়ে। এ জন্য আলোচ্য আয়াতে তাদের এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে যে নিজেদের ঘরবাড়ি কেবলামুখী করে নির্মাণ করা হলে ঘরেই প্রার্থনা করা যাবে। এই আয়াত থেকে কয়েকটি বিষয় জানা যায়Ñপ্রথমত, মুসা (আ.)-এর ধর্মেও নামাজের বিধান ছিল। দুই. ইহুদিদের ধর্ম মতে সওমাআহ বা উপাসনালয়ে উপাসনা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ইসলাম ধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, মসজিদ ছাড়া অন্য স্থানে ইবাদত করলেও ইবাদত কবুল হয়। তিন. মুসা (আ.)-এর অনুসারীদের কেবলামুখী হয়েই নামাজ আদায় করতে হতো। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর মতে, মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীদের জন্য কাবা শরিফের দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ আদায়ের নির্দেশ ছিল।
জামাতে নামাজ আদায়ের গুরুত্ব: আল্লামা ওহবা জুহাইলি (রহ.) লিখেছেন, এই আয়াত থেকে মুফতিগণ ঘরে নামাজ আদায় বৈধ হওয়ার ফতোয়া দিয়েছেন। তবে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করা খুবই সওয়াবের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদের এমন বিষয় জানাব না, যার মাধ্যমে আল্লাহ গুনাহগুলো মাফ করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, ‘তা হচ্ছে কষ্টের সময়ে যথাযথভাবে অজু করা, মসজিদের দিকে বেশি বেশি পদচারণ করা এবং এক নামাজের পর অন্য নামাজের অপেক্ষায় থাকা। এটিই হলো সীমান্ত প্রহরা। (তিরমিজি, হাদিস : ৪৮) অন্য হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যায়, তার আসা ও যাওয়ায় প্রতিটি পদক্ষেপে গুনাহ মিটে যায় এবং প্রতি পদক্ষেপে নেক আমল লেখা হয়। (আহমাদ, হাদিস : ৬৩১১) হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে গ্রামে বা মরুপ্রান্তরে তিনজন লোক অবস্থান করে অথচ তারা জামাত কায়েম করে নামাজ আদায় করে না, শয়তান তাদের ওপর চড়ে বসে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এশা ও ফজরের নামাজ মুনাফিকদের কাছে সবচেয়ে বেশি ভারী বোঝা বলে মনে হয়। (বুখারি ও মুসলিম : ১৪১১) হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, একসময় আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে একমাত্র প্রকাশ্য মুনাফিক ছাড়া আর কেউ জামাতে নামাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকেনি। (মুসলিম, হাদিস : ১০৪৬) মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়ের অশেষ সওয়াব সম্পর্কে রাসুুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত একা নামাজ পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ ঊর্ধ্বে। (বুখারি ও মুসলিম)