শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলতা
আব্দুল্লা বিন আব্দুল মালেক: অল্প নেক আমলের বিনিময়ে আল্লাহর অসীম দয়া ও অনুগ্রহের পাত্র হওয়ার জন্য নবী করিমের (সা.) মুখ নিঃসৃত অমিয় বাণীতে প্রদত্ত উত্তম পন্থাগুলো থেকে একটি অতি সহজ পন্থা হলো, শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা। বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই ছয়টি নফল রোজা রাখবে, তখন আল্লাহ তাকে পূর্ণ একটি বছর রোজা রাখার সওয়াব দিয়ে দেবেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পূর্ণ বছরই রোজা রাখল। (সহিহ মুসলিম: ১১৬৪)
শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা পালন সারাটি বছর রোজা রাখার সওয়াবপ্রাপ্তির এমনি একটি পরম সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। কোনো ব্যক্তি যখন রমজান মাসের রোজা রেখে তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসেও ছয়টি রোজা পালন করল, সে এই রোজার কারণে আল্লাহর দরবারে পূর্ণ একটি বছর রোজা রাখার সমান সওয়াব পেয়ে গেল। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে যে, রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান; এই হলো এক বছরের রোজা। অন্য এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে, সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য। (আহমাদ: ৫/২৮০, দারেমি: ১৭৫৫)
কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতাস্বরূপ শাওয়ালের ছয়টি নফল রোজার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুস্তাহাব। মাহে রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের মধ্যে ছয়টি রোজা রাখার ফজিলত কতই না মহান! কারও পক্ষে সহজেই সম্ভব নয় এক বছর লাগাতার রোজা রাখা। অথচ এই নেক আমলটা বিরাট ফজিলত সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও তা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব। একদা হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) সারা বছর রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে তোমার ওপর তোমার পরিবার-পরিজনের হক বা অধিকার রয়েছে। অতঃপর তিনি বললেন, মাহে রমজানের এবং তার পরবর্তী দিনগুলোরও প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখবে। সুতরাং যখন তুমি এই রোজাগুলো রাখবে, তখন যেন তুমি সারাটা বছরই রোজা রাখলে। কোনো কিছুতেই যাতে শাওয়ালের নফল রোজাগুলো ছুটে না যায় এবং কোনো ব্যস্ততা যেন মানুষকে অধিক সওয়াব অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শাওয়ালের ঐচ্ছিক রোজা মাসের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত পালন করা যাবে। ধারাবাহিক ও অধারাবাহিক, যেভাবেই হোক না কেন, রোজাদার অবশ্যই এর সওয়াবের অধিকারী হবেন, যদি আল্লাহর দরবারে রোজা কবুল হয়।
তবে যার ওপর মাহে রমজানের রোজা কাজা আছে, সেই ব্যক্তি আগে কাজা আদায় করবেন, তারপর শাওয়ালের ঐচ্ছিক রোজা পালনে ব্রতী হবেন। কারণ, ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরুত্ব রাখে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ফরজের আগে-পরে সুন্নত ও নফল প্রবর্তন করেছেন। যেমনথ ফরজ নামাজের পূর্বাপর সুন্নতগুলো এবং মাহে রমজানের আগে শাবানের ঐচ্ছিক রোজা আর পরে শাওয়ালের নফল রোজা। এই নফল ইবাদতগুলো ফরজের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোর ক্ষতিপূরণ করে। লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী