মুসলমানদের জাতীয় সাংস্কৃতিক চেতনার প্রধান উৎসব ঈদ
কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক: মুসলমানদের জাতীয় সাংস্কৃতিক চেতনার প্রধান উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। যারা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার দ্বারা আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনের নিমিত্তে কষ্ট স্বীকার করে তাকওয়া বা আত্মসংযমশীলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন, মূলতঃ তাদের জন্যই ঈদ হয়ে ওঠে আনন্দ, খুশি এবং ভালোবাসার উৎসব। মুসলমানরা ঈদ উৎসবের মধ্য দিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ উপস্থাপন করে। ঈদুল ফিতরের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন এবং ঈদুল আজহার কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগের প্রশিক্ষণ অর্জিত হয়।
ঈদ উৎসবকে একদিকে যেমন ইবাদত নামক আনুষ্ঠানিকতার কড়া শাসনের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা হয়নি, তেমনি একেবারে ইবাদতের শৃঙ্খলা থেকে বিচ্ছিন্ন হবারও সুযোগ করে দেয়নি।
ঈদের তাকবির, নামাজ, খুতবা ও অন্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে যে সহজবোধ্যতা আছে, তেমনি আছে সুসংঘবদ্ধতার মহান শিক্ষা। এর মাধ্যমে সকল শ্রেণীর মানুষকে উন্মুক্ত ময়দানে সমবেত করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।
জাতীয় ঐক্য ও সংহতি, দেশপ্রেম, মানবতাবোধ জাগানো, আভিজাত্যের মিথ্যা অহংকার এবং সামাজিক ব্যবধানে কুঠারাঘাত করে মানুষে মানুষে ব্যবধান কমানো, সর্বোপরি সকল মুসলমান ভাই ভাই এ মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত করে ঈদ উৎসবের নানাবিধ কর্মসূচি।হ ঈদ একটি ইবাদত। আনন্দ ও ফুর্তি করার মাধ্যমেও যে ইবাদত পালন করা যায়, ঈদ তার অন্যতম উদাহরণ।
শরীয়তসম্মতভাবে আনন্দ প্রকাশ করার বিষয়ে কোরআনে কারিমে এসেছে,বলো, এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম। (সূরা ইউনুস: ৫৮)
আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ এবং শোকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে আমরা ঈদ উদযাপন করব- তবেই স্বার্থক হবে আমাদের ঈদ উৎসব।
ঈদের বৈশিষ্ট্য: ঈদ আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় একটি নেয়ামত। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আগমন করে দেখলেন, মদিনাবাসী খেলাধূলার মধ্য দিয়ে দ্ুিট দিবস উদযাপন করেন।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দ্ুিট দিবস কি? তারা বলল, এ দুই দিন জাহেলি যুগে আমরা খেলাধুলার মধ্যদিয়ে উদযাপন করতাম। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য এর থেকে উত্তম দ্ুিট দিবসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। একটি হলো- ঈদুল আজহা এবং অপরটি হলো- ঈদুল ফিতর। (সুনানে আবু দাঊদ: ৯৫৯)
ইসলামি দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী যদি আমরা ঈদ পালন করি তবে একদিকে যেমন ঈদের অনাবিল আনন্দে ভরে উঠবে আমাদের পার্থিব জীবন, অন্যদিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হবে আমাদের পরকালিন জিন্দেগি।
লেখক: লেখক ও কলামিস্ট